পদ্মার দায়-দেনা পরিশোধ করবে এক্সিম ব্যাংক : নজরুল ইসলাম মজুমদার
পদ্মার দায়-দেনা এক্সিম ব্যাংক পরিশোধ করবে করবে বলে জানিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বলেছেন, একীভূত করা হলেও পদ্মার ব্যাংকের কোনো এমপ্লয়ি চাকরি হারাবেন না। তবে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালকরা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না।
আজ সোমবার (১৮ মার্চ) একীভূত হতে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব কথা বলেন। সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন এক্সিম ব্যাংকের এমডি ফিরোজ হোসেন ও পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আফজাল করিমসহ তিন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠান শেষে নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো চাপ ছিল না, তবে সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ ছিল। আমরা এটা করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। পদ্মাকে একীভূত করা হলেও আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না, সবাই নিরাপদে থাকবেন। পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
আমরা এক্সিম ব্যাংক এগিয়ে এসেছি পদ্মা ব্যাংক টেকওভার করতে জানিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা একত্রিত হয়েছি মার্জার করতে, অ্যাকুইজিশন নয়। পদ্মা ব্যাংক সম্পূর্ণরূপে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মিলিত হয়ে গেছে। পদ্মা ব্যাংকের আর অস্তিত্ব থাকল না। পদ্মা ব্যাংকের সব দায় দেনা এক্সিম ব্যাংক পরিশোধ করবে।
একটা সবল ব্যাংক এবং তুলনামূলক একটু দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে মার্জ হয়েছে মন্তব্যে করে নজরুল ইসলাম বলেন, একীভূত করা হলেও কোনো (পদ্মার) এমপ্লয়ি চাকরি হারাবেন না। তবে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালকরা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পৌনে চার হাজার কোটি টাকা ও সরকারি ব্যাংকের দায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা রয়েছে পদ্মার কাছে। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এখন যেহেতু পদ্মাকে মার্জার করা হলো, এর ফলে পদ্মা ব্যাংকের সব দায়-দেনা এখন এক্সিম ব্যাংক নিয়ে নিয়েছে। তা ছাড়া দুই ব্যাংকের এসেটও আছে।
একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক দুটি একীভূত হতে চুক্তি করেছে। এখন একীভূত হতে তারা আবেদন করবে। তাদের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে নিরীক্ষা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ঠিক থাকলে একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, নতুন একটি ব্যাংক চালুর অনুমতি দেওয়া হলে তখন বিলুপ্ত হবে পদ্মা ব্যাংক। তার আগ পর্যন্ত ব্যাংক দুটি স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ও অনিয়ম-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, খেলাপিদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া যে অন্যায় করবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তাদের আর্থিক অবস্থা জানতে তাই অডিট করা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন একই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংক রেড জোনে আছে। আর ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি। প্রতিবেদনে, পদ্মা ব্যাংক রেড জোনে এবং এক্সিম ব্যাংক ইয়েলো জোনে আছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধবার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।