পানামা পেপার
গোপনীয়তার জন্য নাম সংক্ষেপ ঐশ্বরিয়ার
মোসাক ফনসেকার ফাঁস হয়ে যাওয়া কাগজপত্রে উঠে এসেছে সাবেক বিশ্বসুন্দরী এবং বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের নাম। করবিহীন সুবিধার স্বর্গরাজ্য হিসেবে স্বীকৃত অঞ্চল ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন অ্যাশ, তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাতে জড়িত ছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল অ্যামিক পার্টনারস লিমিটেড। ঘটনা ২০০৫ সালের।
ঐশ্বরিয়ার বাবা রমন রাই কৃষ্ণ, মা বৃন্দা কৃষ্ণ রাজ রাই ও ভাই আদিত্য রাইকে এই প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের ভূমিকায় রাখা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
২০০৫ সালের ১৮ জুন ওই প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে ঐশ্বরিয়াকে ‘শেয়ারহোল্ডার’ হিসেবে স্থান দেওয়া হয় নতুন করে। ৫ জুলাই আসে আরেকটু পরিবর্তন, যা বেশ নাটকীয়! মোসাক ফনসেকার প্রতিবেদন বলছে, “শেয়ারহোল্ডারদের একজন, মিস ঐশ্বরিয়া রাই অনুরোধ করেন তাঁর নামটি সংক্ষিপ্ত করে ‘এ রাই’ রাখার জন্য। এর কারণ হিসেবে তিনি গোপনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেন।”
অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বিয়ের বছরখানেক পর, ২০০৮ সালে কোম্পানির কার্যক্রমে বেশ তোড়জোর লক্ষ করা, এমনটাই বলছে পুরোনো হিসাব।
প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিকে, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার সাপেক্ষে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল এক মার্কিন ডলার, যেখানে প্রতিষ্ঠানের চারজন শেয়ারহোল্ডারের প্রত্যেকের ভাগে ছিল সাড়ে ১২ হাজার শেয়ার।
মোসাক ফনসেকার দুবাই অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে অ্যামিক ক্রয়ের জন্য খরচ হয়েছিল দেড় হাজার মার্কিন ডলার, অ্যাকুইজিশন ফি দেড় হাজার মার্কিন ডলার এবং সাড়ে তিনশ মার্কিন ডলার ছিল লাইসেন্স ফি। দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ‘বিকেআর আদোনিস কানান’ ছিল অ্যামিকের এজেন্ট। ২০০৫ সালের ১২ মে এর একটি হিসাবে ঐশ্বরিয়া ও তাঁর বাবাকে প্রতিষ্ঠানের ‘ফার্স্ট ডিরেক্টর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, মোসাক ফনসেকার তথ্যে অ্যামিকের কোনো ডিরেক্টরেরই ঠিকানা দেওয়া হয়নি। ওই স্থানটি একেবারেই খালি রাখা হয়েছে।
২০০৫ সালের ১৮ জুন আরেকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যেখানে দুবাইয়ে একটি বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নেন চারজনই। এখানে ঐশ্বরিয়া ও তাঁর মাকে পূর্বতন পদ থেকে নামিয়ে আনা হয়, তবে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন চারজনই, যে মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করেছিলেন ঐশ্বরিয়ার বাবা। এ বিষয়ে ফনসেকার বিবরণ পাওয়া যায় এমন, ‘বোর্ডে যে সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, সেটি আমি এখানে উল্লেখ করছি। আমাদের দুজন ডিরেক্টরকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে আরো কিছু বিষয় পরিবর্তন করতে হবে...।’
এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিংয়ের পুরো দায়দায়িত্ব বর্তাবে এবিএন-এএমআরও ব্যাংকের দুবাই শাখার ওপর। অ্যাকাউন্টের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে পালনের পাশাপাশি নন-ডিসক্রেশনারি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে ব্যাংকটি।
এ সিদ্ধান্ত থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায়, এই চার ডিরেক্টরের যেকোনো একজনই হয়তো এই অ্যাকাউন্টটি চালাতেন।
২০০৭ সালে অ্যামিকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। ১০ এপ্রিলের হিসাব অনুসারে দেখা যায়, ঐশ্বরিয়ার ভাই ও বাবা ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছেন এবং চারজনই শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন। এবারেও প্রত্যেকের ভাগে দেখা যায় সাড়ে ১২ হাজার শেয়ার। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করা হয়।
ফনসেকার খতিয়ানে পাওয়া যায় আরেকটি চিত্তাকর্ষক সংযুক্তি। তাঁদের ক্লায়েন্ট (অ্যামিক) যেকোনো শেয়ারহোল্ডারের যদি মৃত্যু ঘটে, সে বিষয়ে একটি এমএএ (মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন) দাবি করেন।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা অর্চনা সদানন্দ পুরো বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন। ঐশ্বরিয়ার পক্ষে তিনি বিবৃতি দেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি (আইসিআইজে, ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস) আসলে কী, আর এটার কাজই বা কী? এটা কি কোনো আইনসিদ্ধ সংস্থা? আর আমরাই বা কীভাবে জানব যে তারা যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক? আপনাদের যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কিছুই সত্য নয়, সম্পূর্ণ মিথ্যা।’