জমে উঠেছে আতর-টুপির বেচাকেনা
আর একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করে ঢাকা ছেড়ে গেছেন অনেকে। তবে ঈদ উপলক্ষে রাজধানীতে টুপি, আতর, তসবি, জায়নামাজের দোকানগুলোয় বেচাকেনা জমে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় ।
বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্রেতারা জানান, ২০টির বেশি দোকান রয়েছে বায়তুল মোকাররমে। এখানে টুপি, আতর, তসবি, জায়নামাজ বিক্রি করে। এসব দোকানে সারাবছরই বেচাকেনা হয়। তবে ঈদ ঘিরে যে বাড়তি বিক্রি হয় তা শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে। প্রতিবছর শাবান মাস থেকেই বিক্রি বেড়ে যায়। একটানা চলে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। ১৫ রোজা অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে দোকানে ক্রেতার চাপ বেড়েছে।
রহিম শেখ নামের এক বিক্রেতা বলেন, ব্যয় বাড়ায় মানুষ এখন এসব পরে কিনছে। কারণ, সবার কাছেই নিত্যদিনের খরচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে। তাই এখন মানুষ আর অতিরিক্ত খচর করতে চায় না। তাই অন্যান্য বছরের চাইতে তুলনায় ব্যস্ততা কিছুটা কম।
আরেকটা বিক্রেতা হালিম বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেক পণ্যের দাম এবার বেড়েছে। প্রতি বছর ডলারের দামের ওপরই পণ্যের দাম কমানো কিংবা বাড়ানো নির্ভর করে। এবারও তাই হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে কিছু পণ্যের আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে বিক্রিতেও দাম বাড়াতে হয়েছে।
জয়নাল শেখ নামে এক ক্রেতা বলেন, অফিসের ছুটি আজ পেয়েছেন। সদরঘাট থেকে রাতে লঞ্চ ছেড়ে যাবেন। তাই যাওয়ার সময় ছেলেদের নিয়ে জায়নামাজ, টুপি ও আতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার দাম কিছুটা বাড়তি। বাড়তি হলেও কিনতে তো হবে।
এদিকে দোকানে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তৈরি ‘উদ’ আতরের একশ মিলিলিটার দাম ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া দামি আতরের তুলনায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকার আতরের দিকেই বেশি নজর ক্রেতাদের। দেশের বাজারে সাধারণত জেসমিন, হাসনা হেনা, রজনীগন্ধা, এক্সকাচি বেলি, সিলভার, চকোলেট মাক্সসুলতান, আমির আল কুয়াদিরাজা ওপেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, রয়েল, তরেঞ্জ, সফট, লর্ডনিভিয়া মেন, রয়েল ম্যাবরেজজপি, রাসা, আল ফারিসবেস্ট, ফিগো, হাজরে আসওয়াদ নামের আতর বেশি বিক্রি হয়। এগুলোর দাম প্রতি এমএল ১০০ থেকে দেড়শ টাকা।
আরও দেখা গেছে, আতরের মধ্যে রয়্যাল, কদম, ফেরারি এগুলো বেশি চলে। সবগুলো মিলির (ছোট) দামই ১৫০-২০০ টাকা। আতর ছাড়াও এসব দোকানে কাচ, প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণে তৈরি আতরদানিও পাওয়া যায়। আতর ছাড়াও দেশি, পাকিস্তানি ও চিনের তৈরি টুপি বিক্রি হচ্ছে। কম দামে বৈচিত্র্যময় নকশার কারণে এগুলোর চাহিদা বেশি। তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকেও টুপি আসে। নকশা, কাপড়ভেদে ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের টুপিও পাওয়া যায়। ১৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে চিনা ও পাকিস্তানি টুপি পাওয়া যায়। চিনা টুপি ১৫০-৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০-৬৫০ টাকা, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে চিনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০ টাকা, পাঠান ৪৫০ টাকা এবং ছোট পুঁতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া নেটের তৈরি চিনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কির টুপি ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এখানকার দোকানে বিচিত্রময় নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের জায়নামাজও রয়েছে। সুতি, মখমল, সিলিকন, পশমিসহ বিভিন্ন রকমের এসব জায়নামাজ বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, কাশ্মির, বেলজিয়াম, চিন, সৌদি আরব ও কাতার থেকে আসে। দাম পড়ছে ১২০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে কাঠ, প্লাস্টিক, মুক্তা, পাথর, হাতির দাঁত, হরিণের শিং, ক্রিস্টালসহ বিভিন্ন উপাদানে তৈরি তসবিহ। এর মধ্যে ২৫ গুটি, ৫০ গুটি থেকে শুরু করে ১০০, ২০০, ২৫০ ও সর্বোচ্চ ৫০০ গুটির তসবিহ পাওয়া যায়। তবে ডিজিটাল তসবিরও চাহিদা বেশি। যার দাম ৫০-১০ হাজার টাকার মধ্যে।