হামলা নয়, আমরা ইসরায়েলকে রক্ষায় একনিষ্ঠ : ইরানকে বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরান শিগগিরই ইসরায়েলে আক্রমণ করবে। ইরানকে তিনি ইসরায়েলে হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলে আক্রমণ করবেন না। আমরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় একনিষ্ঠ।’
এ ছাড়া মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের হামলা হতে পারে। ইরানকে ইসরায়েলে হামলা না করার আহ্বান জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে সমর্থন দেব। ইসরায়েলকে রক্ষায় আমরা সাহায্য করব এবং ইরান সফল হবে না।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে নিজেদের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের তেল আবিব, জেরুজালেম ও বেরশেবা শহরের বাইরে ভ্রমণ না করতে বলেছে। এমন সতর্কবার্তার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসরায়েলি সরকার জনগণকে তিন দিনের জন্য খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। ইসরায়েলের রেডিও অবশ্য জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আক্রমণের আশঙ্কায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সৈন্যদের জন্য ছুটি বাতিল করেছে, বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে এবং রিজার্ভ সৈন্যদের ডেকেছে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডস। এলিট কুদস বাহিনীটির সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার সহকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন। সিরিয়ায় নিজেদের কনস্যুলেট ভবনে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি।
ইসরায়েল কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে এর পেছনে দেশটি রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে শত শত হামলা চালানোর কথা অবশ্য স্বীকার করে ইসরায়েলি বাহিনী। সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীকে বিপ্লবী গার্ড অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দেয় বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং লেবানন ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর আন্তসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল পাল্টা হামলা জোরদার করেছে।
গাজায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলার একপর্যায়ে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের পাশে কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য তারা প্রস্তুত। কেউ যদি আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাহলে আমরাও দেশের স্বার্থে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি।’
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার এরিক কুরিলা নিরাপত্তার হুমকি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসরায়েল গেছেন। পেন্টাগন বলেছে, তার সফরটি পূর্বে নির্ধারিত ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে তা এগিয়ে আনা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন বলেন, তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইরান যেন মধ্যপ্রাচ্যকে বৃহত্তর সংঘাতের দিকে টেনে না নেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি যুক্তি দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা বৃদ্ধিতে কারও স্বার্থ নেই।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে বলেন, ‘ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সরাসরি ইরানি যেকোনো আক্রমণ হলে দেশটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হবে।’
বৃহস্পতিবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমি এ সিদ্ধান্তের পেছনের সুনির্দিষ্ট মূল্যায়ন প্রকাশ করব না। এটি পরিষ্কার, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরায়েলে হুমকিমূলক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা হালনাগাদ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্য সরকার ইরান থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আক্রমণের আশঙ্কা তুলে ধরেছে এবং এই ধরনের আক্রমণ আরও ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলের বড় অংশ এবং অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে নাগরিকদের ভ্রমণ না করতে সতর্ক করেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা করে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে। এখনও তাদের হাতে ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে এবং ৩৪ জিম্মির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে, যা এখনও চলছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৫৪৫ জন নিহত এবং ৭৬ হাজার ৯৪ জন আহত হয়েছে।
ইসরাইলকে তাদের উত্তর সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। ইরাক ও ইয়েমেনে থাকা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানার চেষ্টার পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণের চেষ্টা করেছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা করেছে। প্রতিশোধ হিসেবে ইয়েমেনে হুতি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।