শেষ স্ট্যাটাসে যা লিখেছিলেন নাজিমুদ্দিন সামাদ
দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ (২৬) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। দেশ ও সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সব সময়ই সরব ছিলেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পর মাথায় গুলি করে সামাদকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ধারণা, সমাজের বিভিন্ন প্রতিবাদী পোস্ট ও স্ট্যাটাসের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন সামাদ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সরকার, এবার একটু নড়েচড়ে বসো বাবা। দেশের যা অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার যা অবনতি, তাতে গদিতে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। জনরোষ বলে একটা কথা আছে। এটার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে না চাইলে এক্ষুনি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। নতুবা দিন ফুরিয়ে আসবে খুব দ্রুত।’
এই পোস্টের বিষয়ে সেখানে সামাদের এক বন্ধু প্রশ্ন করেন, ‘আদৌ কি কিছু হবে?’ জবাবে সামাদ বলেন, ‘সেটাই প্রশ্ন। আদৌ কি সরকারের টনক নড়বে!’
নাজিমুদ্দিন সামাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, নিজের পরিচিত অংশে সামাদ উল্লেখ করেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ, সিলেট জেলার তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তবে ফেসবুকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে বেশ কিছু পোস্ট দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল নাজিমুদ্দিন সামাদ লেখেন, ‘আওয়ামী ওলামা লীগ আর বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দুই বিপরীত মেরুর দুই বাসিন্দা। ওলামা লীগ কখনোই বাহাত্তরের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চায়নি এবং চাইবে না।’
ফেসবুকে দেখা যায়, সামাদের পরিচিত ও বন্ধুরা সেখানে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিজেদের মন্তব্য দিচ্ছেন। তাঁদের বেশির ভাগেরই দাবি, বিভিন্ন সময়ে সামাদের করা সত্যভাষণই তাঁর বেঁচে থাকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম জানান, নিহত সামাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের (এলএলএম) ‘বি’ সেকশনের ছাত্র ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। এসআই নুরুল সামাদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সামাদকে কোপানোর পর গুলি করা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর মাথায় কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। তবে গুলি করা হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রাতে মোটরসাইকেলে তিন-চার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এসে প্রথমে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলির পরপরই নিহতের মাথা থেকে মগজ মাটিতে ছিটকে পড়ে এবং নিথর দেহটি পাশেই লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়।
এ ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত কিংবা আটক করা যায়নি। এমনকি হত্যার কারণও জানা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।