ইমামের স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
নড়াইল সদরে নিখোঁজের তিন দিন পর মোছা. ইতি বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর গলা কাটা মরদেহ তারই ভাড়াটিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার সিংগা শোলপুর ইউনিয়নের গোবরা গ্রাম থেকে গলাকাটা এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইতি বেগম ওই গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি লোহাগড়া উপজেলার মুচড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমাম।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও নিহত ইতির স্বজনরা জানায়, সন্তানহীন ইমাম শফিকুলের স্ত্রী ইতি খানম বসতবাড়িতে একা থাকতেন। শফিকুল লোহাগড়া উপজেলার একটি মসজিদে ইমামতি করার কারণে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন, আর ছুটিতে বাড়িতে আসেন। বছর খানেক আগে কাজের সন্ধানে পরিবার নিয়ে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকা থেকে মনিরুল মোল্যা নামে এক দিনমজুর এই এলাকায় আসেন। তাঁকে ইমাম দম্পতি নিজেদের বাড়ির ফাকা একচালা ঘরটি ভাড়া দেন। মাস দুইয়েক আগে ভাড়াটিয়া মনিরুল তার পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে নিজে কাজের তাগিদে ওই বাড়িতে অবস্থান করেন। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ইমাম শফিকুল গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) নিজের কর্মস্থল লোহাগড়ায় চলে যান।
এদিকে গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে প্রতিবেশীরা ইমাম দম্পতির ঘরসহ ভাড়াটিয়ার ঘরে তালা ঝুলতে দেখেন। পরের দিন শনিবার ইমামের স্ত্রীকে বাড়িতে না পেয়ে স্বজনরা তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানান। গ্রামে একাধিক আত্মীয়র বাড়ি থাকায় ইমাম শফিকুল ফোন করে জানান নিশ্চয়ই তার স্ত্রী কোনো বাড়ি বেড়াতে গেছেন। এর আগেও একাধিকবার ইতি সপ্তাহ খানেকের জন্য আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেছেন বলে স্ত্রীকে নিয়ে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা করেননি তিনি। গতকাল রোববার ইমামদের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে বিষয়টি স্থানীয়রা ইমাম শফিকুলসহ পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভাড়াটিয়া মনিরুলে ঘরের খাটের নিচ থেকে ইমামের স্ত্রী ইতির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে।
ইমাম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একটি মসজিদের ইমামতি করছি। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আমি ভালোবেসে আগলে রেখেছিলাম ইতিকে। সন্তান হয়নি তা নিয়ে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি ছিল না। এত বছরের সংসার জীবনে একটি টোকাও তার গায়ে দেইনি। বিশ্বাস করে ভাইয়ের জায়গা দিয়ে মনিরুলকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলাম। সে আমার বিশ্বাস নষ্ট করে আমার পরহেজগার স্ত্রীকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে বাড়ি লুট করে চলে গেল। আমি তার ফাঁসি চাই।’
নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমরা ইমাম শফিকুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া মনিরুলের ঘরের খাটের নিচ থেকে ইতি খানম নামে মহিলার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত বড় কাস্তে আলামত হিসেবে জব্দ করি। মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহের তালিকায় থাকা পলাতক মনিরুল মোল্যাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে জানানো যাবে হত্যার প্রকৃত কারণ কী এবং কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।