‘প্রয়োজনে গারদে লাশ ঢুকবে’
‘আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রানিং মেয়র। আমাকে ওয়ারেন্ট দেখান। কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছেন কাগজ দেখান। প্রয়োজনে আমার লাশ ঢুকবে। তবু আমি গারদে ঢুকব না।’
কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান। রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে জয়দেবপুর থানার পুলিশ এম এ মান্নানকে থানাহাজতে ঢোকাতে চাইলে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় এনটিভির এই প্রতিবেদকসহ অন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক-চা বাগান সড়ক থেকে এম এ মান্নানকে আটক করেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, আজ সন্ধ্যার পর তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত।
তবে জয়দেবপুর থানাধীন ভোগড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, সন্ধ্যার পর জয়দেবপুর চৌরাস্তায় একটি বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
একই তথ্য জানিয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন এনটিভি অনলাইনকে জানান, সন্ধ্যার পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে একটি বাসে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
এদিকে বাসে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগার বিষয়টি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করলেও পুলিশ ওই ঘটনায় মেয়র এম এ মান্নানকে আটক করে। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তাঁকে জয়দেবপুর থানায় সোপর্দ করে ডিবি পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার রেজাউল হাসান সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যার পর জয়দেবপুর চৌরাস্তায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মেয়র এম এ মান্নানকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা আটক করেছেন। পরে তাঁকে থানায় সোপর্দ করে ডিবি পুলিশ।
গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেয়র এম এ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত বছরের ১৯ আগস্ট এম এ মান্নানকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
পরে বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন মেয়র মান্নান। রিটের শুনানি শেষে গত ১১ এপ্রিল আদালত বরখাস্তের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এর ফলে তিনি মেয়র পদ ফিরে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।
অধ্যাপক মান্নান গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের পরপর এম এ মান্নানকে আরো কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রতিটি মামলায় তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেও পুলিশ নতুন নতুন মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। এভাবে মোট ২২টি মামলায় জামিন লাভের পর গত ২ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।