শফিক রেহমানকে কবজা করতে না পেরে গ্রেপ্তার
সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন এ দাবি জানান।
এর আগে সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে ২০১৫ সালে পল্টন থানায় করা একটি মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দুপুরে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শফিক রেহমানের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তবে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাঁর স্ত্রী তালেয়া রেহমান বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন বলে বাসায় ঢোকেন কয়েকজন ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পরই এই ব্যক্তিরা ধরে নিয়ে যান শফিককে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকারের নির্মম আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘তিনি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার, ব্যর্থতা ও কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লিখে যান। এই ঘৃণ্য অপকর্মটি করার আরেকটি কারণ হলো- বর্তমান সরকারপ্রধানের গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী নীতি শফিক রেহমান তাঁর শাণিত লেখনীর দ্বারা ফুটিয়ে তোলেন। শফিক রেহমান সত্য উচ্চারণে অবিচল ও সাহসী এক কলমযোদ্ধা। সেই কারণে তাঁকে কব্জা করতে না পেরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটি সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ।’
খালেদা জিয়া এ ঘটনাকে বর্তমান সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের উদ্দেশে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- মামলা, হামলা, খুন, জখম, গুম, অপহরণসহ নানাবিধ বীভৎস অনাচার ঢাকতেই আপনারা শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছেন। এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা।’
সরকারের সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের অপকীর্তি ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে দেশকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে এক ভয়ঙ্কর অতল গভীর খাদে। মানুষের ভোটাধিকার হরণের পর বাকস্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে তাদের ওপর চলছে দলন-পীড়ন।’
বিএনপি চেয়ারপাসন ‘বাক, ব্যক্তি, লেখনী, ভাষণ, মুদ্রণের স্বাধীনতাসহ জনগণের সব গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার’ জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
‘মেয়র মান্নানকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে’
একই রকম এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি মেয়রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পছন্দ নয়। তাই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে।’
‘একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা মেয়র মান্নানকে সাজানো মিথ্যা মামলায় আবারও গ্রেপ্তার করা হয়েছে’, যোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কেপি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পরেই কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক-ফুলবাড়িয়া সড়কের ভান্নারা এলাকা থেকে অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ ১০ জনকে গাজীপুর ডিবি পুলিশ আটক করে। রাত ১১টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁদের জয়দেবপুর থানায় নিয়ে যায়।
তবে ঘটনার পর পরই জয়দেবপুর থানাধীন ভোগড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন লাগে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আহাদুল ইসলাম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এঁদের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিএনপিপন্থী ১১ জন কাউন্সিলর রয়েছেন।
আজ শনিবার আদালতের মাধ্যমে মেয়র মান্নানসহ ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।