নরসিংদীর সেই আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ
নরসিংদীর রায়পুরায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ফেঁসে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
urgentPhoto
সেই সঙ্গে রায়পুরার মরজাল ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সানজিদা খাতুনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আতিয়ার রহমান আজ সোমবার বিকেলে রাধানগর ও মরজাল ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারগিস সুলতানাকে এই লিখিত নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাদেক রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ওই ইউনিয়নে আর কেউ প্রার্থী না হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
আবদুস সাদেকের বক্তব্য নিয়ে গত ২০ এপ্রিল এনটিভি অনলাইনে ‘নৌকাকে জয়ী করতে না পারলে কাউকে ছাড়ব না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সাদেকের অডিও ফাইল যুক্ত করা হয়।
গত ১৭ এপ্রিল রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সানজিদা খাতুন নাসিমার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কর্মিসভায় বক্তব্য দেন আবদুস সাদেক। মরজাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে ওই কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আবদুস সাদেক বলেন, ‘যদি আপনারা এই আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী নাসিমাকে ভোট দিতে না পারেন, আগামী পাঁচ বছর এই মরজাল ইউনিয়নে একটি টাকাও উন্নয়ন করতে দেওয়া হবে না।... নাসিমাকে কীভাবে বিজয়ী করবেন আপনারা জানেন। যেভাবে তাঁকে বিজয়ী করেন আমাদের আপত্তি নেই। কাকে মারবেন, কাকে ধরবেন- আমরা জানি না। আমরা জানি, নৌকা মার্কা বিজয়ী করে আনতে হবে। যদি না আনতে পারেন, আপনাদের দেখব না, আপনাদের কাউকে আমরা ছাড়ব না।’
আবদুস সাদেক বলেন, ‘এই ইউপি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মতোই। এখানে কোনো রকমের ছাড় দেওয়া চলবে না। জাতীয় নির্বাচন যেভাবে করেন, এই নির্বাচন সেভাবে করেন। কারণ মার্কা জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা। স্থানীয় নির্বাচনেও মার্কা নৌকা।’
আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক বলেন, ‘ভাইয়েরা সোচ্চার হোন। একটু শক্ত হাতে দাঁড়ান, শক্ত কিছু নিয়ে দাঁড়ান। আমরা আপনাদের পেছনে আছি। আওয়ামী লীগ আপনাদের পেছনে আছি। কার ঠ্যাং ভাঙবেন, কার হাত ভাঙবেন আমরা জানি না। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে আনতে হবে। এর ভেতরে কে পড়ে আমরা জানি না। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। প্রত্যেক সেন্টারে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করুন। এই ৫১ জনকে জিজ্ঞাসা করব কোনো সেন্টার থেকে যদি নৌকা ফেল করে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। জানি না কী করবেন, সিল মারবেন, না কী মারবেন, জানি না। আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি তাকে আপনাদের উঠাইয়া আনতে হবে। নতুবা আপনাদের জবাবদিহি আছে। দয়া কইরা সিল মারবেন না কী করবেন এ আপনাদের বিষয়। আমরা এটা দেখতে আসব না। তবে আমরা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে আপনাদের যা যা লাগে তাই দেব, যেকোনো সহযোগিতা লাগলে দেব।’
এসব কথা শুনে নেতাকর্মীরা কিছুক্ষণ ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান ও হাততালি দেন।
স্লোগান থামলে আবদুস সাদেক বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা, এখনো আপনারা যারা দাঁড়িয়ে আছেন, হাজার হাজার মানুষ। আপনার ইচ্ছা করলে নাসিমাকে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) পাস করাতে পারেন। আপনাদের পায়ে হাত রেখে বলছি, একজন করে যদি, প্রতিজনে যদি ৫০টা করে ভোট কামাই করেন, তাইলে ভোট ভৈরব থানায় বেঁচতে পারবেন, আল্লাহর রহমতে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আবদুস সাদেক বলেন, ‘আপনাদের যা যা লাগে আমরা দিয়ে দেব। নাসিমাকে পাস করান।... আমাদের প্রার্থীকে পাস করাতে হবে। সোজা কথা পাস চাই। এখানে কী করবেন না করবেন আপনাদের বিষয়। আমার মনে হয় সকাল ১১টার আগে সাইরা রাখলেই (সিলমারা) ভালো।’
এই কথা শুনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এরপর ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় মাঝপথে একজন বক্তা বলেন, ‘সাদেক ভাই যে কথা বলছে, আমরা ১০টার মধ্যে ইনশাল্লাহ সাইরা ফেলাব। চিন্তা করার কিছু নাই।’ এরপর আবদুস সাদেক আবার মাইকে বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধ হোক আপত্তি নাই। তয় ১১টার আগে শেষ কইরা হালাইয়েন।’ এরপর জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্য শেষ করেন আবদুস সাদেক।
আবদুস সাদেকের ওই সব বক্তব্যসহ এনটিভি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তি ওই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও সংবাদটি শেয়ার করে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আতিয়ার রহমান আজ বিকেলে রাধানগর ও মরজাল ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নারগিস সুলতানাকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে বলে নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিতব্য রায়পুরা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্বাচনী প্রচারণাকালে প্রদত্ত বক্তব্য ইউনিয়ন পরিষদ বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ১৮ (ক) ও ৩০ লঙ্ঘন করেছেন।
আচরণবিধি ভঙ্গকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য মামলা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
পত্রে উপরোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রাধানগর ও মরজাল ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নারগিস সুলতানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।