স্থায়ী আবাস পদ্ধতি চালু করছে সৌদি সরকার
সৌদি আরবে বসবাসরত প্রবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘স্থায়ী আবাস’ পদ্ধতি বিবেচনা করছে দেশটির সরকার।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তেলনির্ভরতা কমাতেই এ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে এবং আগামীতে তেলের দাম ৭০ ডলার হলেও এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে গত সোমবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান।
দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমেরিকার আদলে একটি গ্রিন কার্ড পদ্ধতি প্রবর্তনের চিন্তা করা হয়েছে। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই।
এ প্রকল্প কার্যকর হলে প্রবাসী কর্মীদের দুঃসহ কফিল জীবনের অবসান হবে বলে মনে করেন তাঁদের কেউ কেউ। এতে করে সব বৈধ-অবৈধ শ্রমিককে কফিলের অনৈতিক মুনাফালোভী মানসিকতা থেকে রক্ষা করবে।
সৌদি আরবের শ্রমবিষয়ক বিশেষ কমিটির প্রধান নিদাল রিদওয়ান একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এই পদ্ধতি সৌদি স্বরাষ্ট্র (জাওয়াযাত) ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে করা হবে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিদেশি নাগরিক কেবল সৌদি কফিল পদ্ধতি বা হজের জন্য এই দেশে আসতে পারেন। নতুন এই পদ্ধতিতে দক্ষ কর্মীরা তাঁদের নিজের দায়িত্বেই এখানে আসতে পারবেন। এর ফলে বর্তমানের কাফালা পদ্ধতির অবসান ঘটবে বলে মনে করেন অনেকে।
সৌদি আরবে কর্মরত অভিবাসী বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই কার্ড পদ্ধতিতে প্রবাসীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সেগুলো হলো—কাফালা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটবে এবং কর্মী নিজেই তাঁর স্পন্সর হবেন, কর্মী এ দেশে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন, তাঁর আকামার মেয়াদ শেষ হওয়া বা মালিক কর্তৃক পলাতক অভিযোগ করা থেকে মুক্তি পাবেন। স্থানীয় বা সৌদি নাগরিক ছাড়াই প্রবাসীরা এখানে সব ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সৌদি আরবের নাগরিকদের মতো বিনামূল্যের চিকিৎসাসেবা পাবেন। এ ছাড়া প্রবাসীরা তাঁদের নির্ধারিত GOSI (সামাজিক নিরাপত্তা বিমার) প্রিমিয়াম দিলে অবসরকালীন ভাতা পাবেন। সৌদি আরবের নাগরিকদের মতো প্রবাসীরাও সে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন, যা আগে শুধু সৌদি নাগরিকের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এবং নতুন নিয়মের ফলে প্রবাসীরাও সৌদি আরবের স্থাবর সম্পদের মালিক হতে পারবেন।
এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও নতুন পদ্ধতির গ্রিনকার্ডধারীরা বেশ কিছু সুযোগ পাবেন না। আর এগুলো হচ্ছে—সৌদি আরবের ভোটাধিকার না পাওয়া, রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক বা অংশের মালিক হতে না পারা, দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করতে না পারা এবং রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে না পারা।