দাবি, দুর্যোগ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত ৫ আগস্ট। পদত্যাগ করে ওইদিনই পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। এরপর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্ণ হয়েছে দুই মাস।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েই কঠিন ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলাসহ নানা চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে সরকারকে। পাশাপাশি জুডিসিয়াল ক্যু, প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র, সংখ্যালঘু ইস্যু, আনসার বিদ্রোহ, পাহাড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয় এই সময়ে। ধৈর্যের সঙ্গে এসব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার।
গত মাসে জাতিসংঘে ড. ইউনূসের উপস্থিতি বিশ্বে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদার আসনে নিয়ে যায়। বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। বাংলাদেশ প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পায়।
বিগত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী মহলের হাত ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লাখো কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ায় ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা করে ড. ইউনূসের সরকার। তবে প্রবাসী আয়ের পালে হাওয়া লাগায় অর্থনৈতিক দুরাবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছে সরকার। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার।
অন্যদিকে, বন্যায় মাঠঘাট ডুবে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় উচ্চ দ্রব্যমূল্যে ভুগছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া অস্থিরতা রয়েছে জনপ্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংক ও শিক্ষাখাতে। পুরোপুরি পুনর্গঠন করা যায়নি বিচার বিভাগ। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, কল-কারখানা অচলায়তন, বন্যাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এসব মোকাবিলা করে ড. ইউনূস সরকারকে পুরোপুরি সফল হতে সময় লাগছে।
অভিযোগ রয়েছে, পুরোনো সরকারের আমলারা সরকারকে ঠিকমতো সহযোগিতা করছেন না। এ ছাড়া পদোন্নতি ও দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে সরকারি চাকরিজীবীরা। অন্যদিকে প্রশাসনের লোকদের দুর্নীতির অভিযোগও সামনে আসছে। যা সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। বেহাল আর্থিক খাতও। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত ব্যাংকিং খাত। এ ছাড়াও তারল্য সংকট, সুশাসনের অভাবসহ একাধিক সমস্যায় ভুগছে অনেকগুলো ব্যাংক।
শিক্ষাঙ্গনেও অস্থিরতা পুরোপুরি কাটেনি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ক্লাস পরীক্ষা চালু হলেও এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা রয়ে গেছে। শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বসে আছেন পতিত সরকারের অনুগতরা।
অন্যদিকে, যত্রতত্র বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, যার কারণে অস্থিরতা রয়েছে রাষ্ট্রে। এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগও নেই সরকারের। অনেকে সরকারকে অস্থিরতায় ফেলতে এমন করছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায় একটি গোষ্ঠী। অস্থিরতা রয়েছে পোশাকখাতেও। এখনও পোশাকখাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি। বিক্ষোভে বন্ধ রয়েছে অসংখ্য পোশাক কারখানা।
ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এতদিন ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে একতরফা পেয়ে আসছিল, এখন দেওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে ভারতকে। সম্প্রতি ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। ভারতে অনীহার কারণে বহু বছর ধরে ঝুলে ছিল বিষয়টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করতে নানামুখী পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।