বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন : দুদু
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া বাংলাদেশকে রক্ষার আর কোনো পথ নেই। এই দেশ স্বাধীন করতে এক সাগর রক্ত দিয়েছে দেশের মানুষ। এরকম রক্ত পূর্ব এশিয়ার কোন জাতি দেয়নি। শুধু তাই নয় বিশ্বের অন্য কোনো জাতি দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সেই দেশে ৫২ বছর পরে এসে গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলতে হবে এটা বড়ই ট্রাজেডি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মানুষকে ভোটের অধিকার দিতে হবে। নির্বাচন করার ক্ষমতা দিতে হবে।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদু এসব কথা বলেন।
দুদু বলেন, বাংলাদেশ পড়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হাতে। আমরা চোর উৎপাদনের হাতে পড়েছিলাম। শেখ মুজিব জীবিত থাকা অবস্থায় তার ছেলে ব্যাংক ডাকাত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। সেসহ পরিবার মারা গেছে। অপশাসনের কি ভয়ংকর পরিণতি তা আমরা দেখেছি। তার দুটি কন্যা ছিল তারা এত বড় লুটেরা, খুনি যে ইতিহাসের ভয়ংকর অধ্যায় হিসেবে থাকবে। তারা লুকিয়ে থেকে পালিয়ে গিয়ে রাজনীতির কথা বলে তখন আমার মনে প্রশ্ন থাকে রাজনীতির অর্থটা কি।
শেখ হাসিনাকে গুলিস্তান মোড়ে বিচার করা উচিত মন্তব্য করে দুদু বলেন, তাদের বিচার হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, নিম্ন আদালতে নয়; গুলিস্তান মোড়ে বিচার করা উচিত। তারা যেভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, এটা ভাবা যায়। যারা হত্যাকারী তাদেরকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী ছিল। আর এদেশের কৃষক শ্রমিক যারা দেশকে রক্ষা করছে, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আনসার বাহিনীও নাই।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা সমর্থন করেছি, এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করেছে। সহযোগিতা করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এ সরকারের যারা আছেন তারা হয়তো রাজনীতি করেননি। কিন্তু তারা জ্ঞানী। তাদেরকে বুঝতে হবে। কারণ বুঝে শুনেই তারা ক্ষমতা নিয়েছে। তাদের মত জানা শোনা লোক বাংলাদেশে কমই আছে। রাজনীতি বুঝতে হবে। যদি না বুঝেন, তাহলে আমাদের কাছে আসুন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে যান, কৃষক-শ্রমিকের কাছে যান। কে লুটেরা, খুনি এটা না বোঝার কিছু নাই। দিনের আলোতে তারা করেছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া বাংলাদেশকে রক্ষা করার আর কোন পথ নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই দেশ স্বাধীন করতে এক সাগর রক্ত দিয়েছে দেশের মানুষ। এরকম রক্ত পূর্ব এশিয়ার কোন জাতি দেয়নি। শুধু তাই নয় বিশ্বের অন্য কোন জাতি দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সেই দেশে ৫২ বছর পরে এসে গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলতে হবে, এটা বড়ই ট্রাজেডি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মানুষকে ভোটের অধিকার দেন। নির্বাচন করার ক্ষমতা দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে দুদু বলেন, একটা নির্বাচন দেন। কিসের পুলিশ কিসের প্রশাসন? এসব বাহানা আমাদেরকে বাদ দিতে হবে। যে জাতি বিনা অস্ত্রে একটা ফ্যাসিস সরকারকে তাড়িয়েছে। তাহলে নির্বাচনের জন্য এত প্রস্তুতি লাগবে কেন? আপনারা মানুষকে ছোট করে দেখবেন না। নির্বাচন দেন নির্বাচন কীভাবে করতে হয় দেশে জনগণ জানে। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, পাকিস্তানে কর্মকর্তাদেরকে আঙুল দেখিয়ে একটা দলকে বিজয় করেছিল। জিয়াউর রহমানকে অখন্ড সমর্থন দিয়েছিল এদেশের মানুষ। বেগম জিয়াকে কেউ পাত্তাই দেয়নি। আওয়ামী লীগ এ দেশের বুদ্ধিজীবী কেউ দেয়নি। বেগম জিয়া এরশাদকে হঠিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন তিনি যোগ্য।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, জাতীয়তাবাদীদের ঠেকানো শুরু হয়েছে ওয়ান ইলেভেন থেকে। তার ধারাবাহিকতা এখনো আছে। কীভাবে বিএনপিকে ঠেকানো যায়, কীভাবে স্বাধীনতাপন্থীদেরকে ঠেকানো যায়, কীভাবে গণতন্ত্রপন্থীদেরকে ঠেকানো যায়। এটা বন্ধ করতে হবে।
এস এম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম রাজন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ লিবারেল পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এম জি আর নাসির মজুমদার, আব্দুল হক, মানবাধিকারকর্মী মঞ্জুর হোসেন ঈসা, কৃষক দলনেতা এসকে সাদী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।