গাজায় গণহত্যা করছে ইসরায়েল : সৌদি যুবরাজ
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই কোনো একজন সৌদি কর্মকর্তার প্রকাশ্যে সবচে কঠোর ভাষায় সমালোচনা। মুসলিম ও আরব নেতাদের এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে যুবরাজ লেবানন ও ইরানে ইসরায়েলি হামলারও সমালোচনা করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত হিসেবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইরানের মাটিতে হামলা শুরুর বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেন। পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলিদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য মুসলিম দেশের নেতারা।
এদিকে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এখনও গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা। গাজা উপত্যকায় অনাহার ও মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, ‘তাৎক্ষণিক সংঘাত ও ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে হামাসকে ধ্বংস করার জন্য গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে এ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ শুরুর ছয় মাসে নিহতদের ৭০ শতাংশই ছিল নারী ও শিশু।
সম্মেলনে মুসলিম নেতারা গাজায় জাতিসংঘের কর্মী ও স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘অবিরাম আক্রমণের’ নিন্দা করেছেন।
গত মাসে ইসরায়েলের সরকার নেসেটে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএকে ইসরায়েল ও দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কাজ করা থেকে নিষিদ্ধের জন্য বিল পাস করেছে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ দেশটির। গাজায় সংস্থাটির মানবিক সহায়তা স্থানান্তরের কার্যক্রম সীমিত করার পদক্ষেপে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
এদিকে, ইসরায়েলের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে অবগত উপসাগরীয় আরব নেতারা। কিন্তু তারা চান, ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে এই অঞ্চলে সংঘাতের অবসান ঘটাতে তার প্রভাব কাজে লাগাতে।
সৌদি আরবে ট্রাম্পকে জো বাইডেনের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ভাবা হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে তার ভূমিকা মিশ্র। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি অধিকৃত গোলান মালভূমিকে অধিভুক্ত করে ইসরায়েলকে খুশি করেছিলেন এবং মুসলিম বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন। তার মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোপুরি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং সুদান তা করতে সম্মত হয়। সৌদি আরবের শীর্ষ স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে আজ সম্পাদকীয় শিরোনাম হলো ‘আশার নতুন যুগ : ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ও স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি’।