দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্যদেশের বিবৃতি বিরল : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চিন্ময় যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্যদেশের বিবৃতি বিরল।
আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে দাঁড়াক, তা কখনোই পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র চায়নি। চায়নি বলেই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাদের অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য কিছু মানুষকে এদেশে পাঠিয়ে চক্রান্ত করছেন। তাদের জন্য তারা বিলাপ করছেন। তারা আটক হলে আক্ষেপ করছেন, প্রতিবাদ করছেন। চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের উলম্ব অভিযান।
রিজভী বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে একটি সংগঠন, যাদের বৈধতা আছে কি না আছে, এ সম্পর্কেও বাংলাদেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতা, যার বিতর্কিত আচার-আচরণের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের ভিতরের কেউ কেউ এবং বাইরে থেকে সেই বিতর্কিত নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদ আসাটাই সারা দেশের মানুষকে একধরনের দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে এবং মানুষ বিস্মিত হয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করছে। চিন্ময় নামে এক ব্যক্তি যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অথচ সেই সংগঠনের নেতারাই জানিয়েছেন, তাকে পূর্বেই অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব বলেন, ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর-ঘাতক সরকারের পতনের পর থেকে এদের (ইসকন) অস্বাভাবিক তৎপরতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। তাদের কী দাবি? দাবি সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি, সেটিও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। তাদের দাবি নিয়ে দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে কী এমন ঘটনা ঘটেছে যে সাতটি বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দিয়েছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? কী করতে চাইছে? আবার পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার গ্রেপ্তারে মুক্তি দাবি করেছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশেতো লুট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি গুম-খুনসহ ভয়ঙ্কর অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। চিন্ময় যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তিনি অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে আর নির্দোষ হলে খালাস পাবেন। কিন্তু দেশের একজনের মুক্তির জন্য অন্যদেশের স্টেটমেন্ট বিরল। ছাত্রলীগের খুনীরা যখন বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নিপুণ রায়কে রাস্তায় ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিল, তখনতো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। তারাওতো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বাংলাদেশে ইসকন নামে ভূঁইফোড় সংগঠনটিকে কখনও দেখিনি শেখ হাসিনা যখন দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল, হাজার হাজার ছাত্রজনতাকে হত্যা করল, তাদের একটি স্টেটমেন্ট দিতে। অথচ, যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা উদ্বেগজনক, যা সারাদেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। অথচ তাদের একজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যারা দুদিন আগেই একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, সেই সংগঠনের একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্যদেশ বিবৃতি দিচ্ছে তার মুক্তির জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কি আছে? এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতিতে প্রমাণিত হয় তারা বিশেষ কোনো মহলকে মদদ দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে সে পরিবর্তনকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
রিজভী বলেন, যে ব্যক্তির জন্য তারা মুক্তি দাবি করছেন সে যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তিটি দেশের স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। কক্সবাজারের এক ওসি একজন মেজরকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সে ওসি হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিল। সে সময়ও আমরা দেখেছি পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র তার পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছে। যারা ঢুকে পড়বে, হেঁটে যাবে, কিছু বলা যাবে না। অন্যায় করলেও কিছু করা যাবে না। এগুলো আজকে মানুষের মনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই জাতির সার্বভৌমত্ব, বিশেষ করে ৫২ থেকে শুরু করে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত যে অর্জনগুলো সে অর্জনকে অবমাননা করা হচ্ছে। এটি কখনও এদেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশের ভেতরে ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের ব্যানারে কী হচ্ছে? কারা করাচ্ছে?
রিজভী বলেন, আমরা বারবার পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের কিছু বিষয় নিয়ে যে সমালোচনা করতাম, তাদের অন্যায়ের যে প্রতিবাদ করতাম, এটি যে ন্যায়সঙ্গত এ ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হলো।