ধানমণ্ডিতে ব্রিটিশ চিকিৎসক খুনে দুই ভাড়াটিয়া জড়িত : পুলিশ
রাজধানীর পশ্চিম ধানমণ্ডির একটি বাসায় গত ১৫ নভেম্বর নৃশংসভাবে খুন হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ (৮২)। পুলিশ বলেছে, আব্দুর রশিদের বাসার দুই ভাড়াটিয়া তাকে খুন করেছেন। রেস্তোরাঁ ব্যবসার অর্থ জোগাতে বাড়িওয়ালা ওই ব্রিটিশ নাগরিকের বাসায় ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটান তারা।
আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ আলম বলেন, ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুর রশিদের বাসায় ভাড়া থাকতেন দুই রেস্টুরেন্ট কর্মচারী মো. নাইম খান (২২) ও মো. জাহিদুর রহমান রিফাত (২০)। রাত ১০টার পর বাসায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া এবং নিয়মিত বাসাভাড়া পরিশোধ না করায় প্রায়ই আব্দুর রশীদের স্ত্রী সুফিয়া রশিদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতেন তারা।
পুলিশ উপকমিশনার আরও বলেন, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে কাজ না করে নিজেরা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালু করতে অর্থের জোগান দিতে বাড়ির মালিকের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাকাতি করতে গিয়েই হত্যা করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদকে। এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত দুই ভাড়াটিয়াসহ আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওন (২২) নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মাসুদ আলম বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ বছরের অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসতেন। গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানার পশ্চিম ধানমণ্ডির একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজন দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করে। প্রবেশের পর ভুক্তভোগী ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদের সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন দুষ্কৃতকারী তার মুখ চেপে ধরে বাধা দেন। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে ডা.এ কে এম আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
মাসুদ আলম আরও বলেন, এ সময় আব্দুর রশিদের স্ত্রীর চিৎকারে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত চিকিৎসক রশিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রমনার ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, ঘটনার পূর্বের বিভিন্ন সময়ে ওই বাসায় মেস হিসেবে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে ২৯ নভেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজার এলাকা থেকে নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজারীবাগ থানার অপর একটি টিম ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার নাইম খান ও জাহিদুর ভিকটিমের বাসার একটি ফ্ল্যাটে মেস করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করত। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাদের মনোমালিন্য হতো। এতে তারা ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিক এর বাসায় প্রবেশ করে টাকাপয়সা নেওয়ার পরিকল্পনাসহ ওই টাকাপয়সা ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫ নভেম্বর রাত আড়াইটার দিকে আবু তাহের শিকদার ওরফে শাওনকে সঙ্গে নিয়ে ভিকটিমের বাসার সীমানা প্রাচীর টপকে টাকাপয়সা লুট করার জন্য বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় ডা. আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের উপস্থিতি টের পান। ডা. আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে তার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আঘাতে প্রাণ হারান ব্রিটিশ নাগরিক।
মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ডিসি মাসুদ আলম।