জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে জমা প্রায় ১০৮ কোটি টাকা
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জানানো হয়েছে ফাউন্ডেশনের ফান্ডে ৩০ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে। আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ অনেকে।
আজকের সভায় আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে গত ৩০ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৫ জন শহীদ পরিবারকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ৭৭৫ জন আহতকে সাত কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা অর্থাৎ মোট এক হাজার ১৪০ জনকে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা বিকাশ ও ক্রসচেকের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতির পর্যালোচনা, গণঅভ্যুথান সংক্রান্ত বিশেষ সেল ও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমসম্পর্কিত আলোচনা, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সহায়তার জন্য মেডিক্যাল সাপোর্ট টিম, আইসিটি সাপোর্ট টিম, লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন নিয়ে আলোচনা হয়।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অব. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জালাল উদ্দীনকে চেয়ারম্যান করে মেডিকেল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছেন।
ডা. মো. জালাল উদ্দীন জানান, এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে থাইল্যান্ডে ও তিনিজনকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আরও দুজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আহত আরও সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান তিনি।
ডা. মো. জালাল উদ্দীন বলেন, এখন পর্যন্ত আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কয়েকটি স্পেশাল মেডিকেল টিম এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে তিনজন, যুক্তরাজ্য থেকে দুজন, ফ্রান্স থেকে একজন, থাইল্যান্ড থেকে ছয়জন ও চীন থেকে ১০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন, অস্ত্রোপচার সম্পন্ন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আহতদের সুচিকিৎসায় প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর কাছে সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গুরুতর আহত যারা তাদের বিস্তারিত মেডিকেল হিস্ট্ররির প্রতিবেদন তৈরি করে দূতাবাসগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছিলেন, তাঁদের আহতদের ব্যাপারে সহানূভুতি আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন।’
এ সময় অতি দ্রুত আহতদের বিস্তারিত মেডিকেল হিস্ট্রির প্রতিবেদন তৈরির পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভুইয়া, শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ, শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামানসহ শহীদ পরিবারের ১৪ সদস্য অংশ নেন। এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্মমভাবে গুলিতে নিহত সন্তানের মরদেহ উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের পরামর্শ দেন এবং জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা কিছু সময়ের জন্য আমাকে আপনাদের অনুভূতি জানিয়েছেন। সন্তান ও ভাই-বোন হারানোর যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা এটি মহাকাব্য। এই অল্প সময় এটি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। যারা শহীদ হয়েছেন তাঁরা একেকটি পরিবার থেকে এসেছেন। আপনারা, আপনাদের পরিবার এমন একেকজন মানুষ তৈরি করেছেন যাঁরা এতখানি দুঃসাহস নিয়ে অধিকারের কথা বলেছেন। আমি এই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই এবং একইসঙ্গে আপনাদেরও, শহীদদের পরিবারের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই।’
অধ্যাপক ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য আহত ও নিহতদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে যেন পালন করা যায়। এটা আপনাদের ফাউন্ডেশন। আপনারা সরাসরি যুক্ত হন, পরামর্শ দেন, নিজের মতো করে গড়ে নেন।