আশা জাগিয়েও হার, ক্যারিবীয়দের কাছে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
ক্রিকেটের সঙ্গে ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তা’ মানিয়ে যায় খুব ভালোভাবেই। সেরা ব্যাটার আউট হয়ে যেতে পারেন শূন্য রানে। আবার সেরা বোলারটির ভাগ্যে দেখা গেল কোনো উইকেটই জুটল না। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতেও দেখা মিলল তেমনটাই। জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করলেও অভিষিক্ত ক্যারিবীয় ব্যাটার জাঙ্গুর সেঞ্চুরিতে শেষমেশ পরাজয় মেনে নিতে হলো বাংলাদেশকে। ৪ উইকেটের জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা। আর মিরাজরা পেল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।
টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে ভিন্ন রূপেই দেখা গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয়টি জিতে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে শেষ করেছিল। তাই প্রত্যাশা ছিল ওয়ানডে সিরিজ হয়তো নিজেদের করে নিতে পারবে। এমন প্রত্যাশার কারণ বিগত পরিসংখ্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিগত ১০ বছরে কোন সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে মাত্র ৪৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১০৪ রান করেন আমির জাঙ্গু।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দারুণ শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ওভার করতে আসা নাসুম আহমেদের ওপর প্রথম বল থেকেই চড়াও হন ব্র্যান্ডন কিং। ওভারের প্রথম পাঁচ বলে ২ চার ও ১ ছক্কা মেরেছিলেন। কিন্তু ঝড়ের আভাস দিয়েই থামতে হয়েছে। উদ্বোধনী সঙ্গী আলিক আথানেজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়েছেন কিং।
চার ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্র্যান্ডন কিংয়ের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আলিক আথানেজ। নাসুম আহমেদের ফুল লেংথ ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন ৮ বলে ৭ রান করা আথানেজ। তৃতীয় উইকেট হারাতেও সময় লাগেনি ক্যারিবীয়দের।
পঞ্চম ওভারে হাসান মাহমুদের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি দূর থেকে খেলার চেষ্টায় স্লিপে ক্যাচ দেন শাই হোপ। যা লুফে নিয়ে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের বিদায় নিশ্চিত করেন সৌম্য সরকার। ৬ বলে ৩ রান করেন হোপ। এরপর বৃষ্টির বাধায় ২৫ মিনিট বন্ধ ছিল খেলা। এরপর বাংলাদেশের বোলারদের পাত্তা না দিয়ে দারুণ ব্যাটিং করেন কার্টি-রাদারফোর্ড। যদিও ৮৮ রানের মাথায় রাদারফোর্ডকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেন তাসকিন। ৩৩ বলে ৩০ রান করেন তিনি।
এরপরই বদলে যায় ম্যাচের গতিপথ। কার্টি–জাঙ্গু জুটি বেশ ভোগায় বাংলাদেশকে। এই জুটিতে যোগ হয় আরও ১৩২ রান। ব্যক্তিগত ৯৫ রানের মাথায় কার্টির বিদায়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। অল্পের জন্য ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না কার্টির। অবশ্য তার বিদায়ের পরও রানের চাকা সচল ছিল ক্যারিবীয়দের। দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন জাঙ্গু।
ইতিহাসের ১৬তম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২য় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকেই সেঞ্চুরি পেলেন আমির জাঙ্গু। ইনিংসের ৪৫তম ওভার করতে আসা আফিফের তৃতীয় বলে বিশাল ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূরণের আনন্দে মাতেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জাঙ্গুর আগে এই কীর্তি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইন্সের। অ্যান্টিগায় ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৮ রানের ইনিংসটা এখনো ওয়ানডে অভিষেকে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।
এর আগে, ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তৃতীয় ওভারে তিন বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আলজারি জোসেফের করা দ্বিতীয় বলে পুল শট করতে গিয়ে বল ওপরে তুলে রাদারফোর্ডের সহজ ক্যাচে পরিণত হন তানজিদ হাসানভ। ৫ বল খেললেও পারেননি রানের খাতা খুলতে। এরপর ব্যাট করতে নামা লিটন দাস নিজের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দিয়েছেন ব্র্যান্ডন কিংয়ের হাতে। লিটনও ২ বল খেললেও পারেননি রানের খাতায় নাম লেখাতে।
৯ রানের মধ্যে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের পাল্টা আক্রমণে কিছুটা চাপমুক্ত হয় বাংলাদেশ। সময়ের সাথে জুটি বড় হয় তাদের। একটা সময় ফিফটি তুলে নেন দুজনই। গড়েন ১৩৬ রানের জুটি। দলীয় ১৪৫ রানের সময় সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
জেডিয়া ব্লেডসকে পরপর দুটি চার মারার পর গুডাকেশ মোটিকে ছক্কায় ওড়ালেন সৌম্য সরকার। তবে এরপর আর টিকলেন না। ছক্কার পরের বলে ব্যাকফুটে বাঁহাতি স্পিনারকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন তিনি। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নেন সৌম্য। তবে কাজ হয়নি, বল আঘাত হানত লেগ স্টাম্পে। ভাঙে ১২৭ বল স্থায়ী ১৩৬ রানের জুটি। ৭৩ বলে চার ছক্কা ও ছয় চারে সৌম্য করেন ৭৩ রান।
এরপর ক্রিজে আসেন আফিফ। তবে, জুটি গড়তে পারেননি তিনি। দলীয় ১৭১ রানের সময় ডিফেন্সিভ শট খেলে সিঙ্গেল নেন আফিফ। নন স্ট্রাইক থেকে স্ট্রাইক প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই রাদারফোর্ডের থ্রোতে রান আউট মিরাজ। ৭৩ বলে ৭৭ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মিরাজের বিদায়ের পর টিকতে পারেননি আফিফ। পরের ওভারেই ফেরেন তিনি। ২৯ বলে ১৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
মিরাজের বিদায়ের পর রানের গতি কিছুটা কমে গেলেও শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ-জাকের জুটিতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। এই জুটিতে যোগ হয় ১৫০ রান। টানা তৃতীয় ম্যাচে ফিফটি তুলে নিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বয়স ৩৮ হলেও এখনও যে ফুরিয়ে যাননি সেটাই প্রমাণ করে যাচ্ছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ৪৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। আর জাকির ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন ৫৩ বলে। শেষমেশ ৩২১ রানে থামে বাংলাদেশ। মাহমুউল্লাহ ৮৪ ও জাকের ৬২ রান করেন।