যে ছয় যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ জানিয়ে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পেছনে ছয়টি যুক্তি তুলে ধরেন আদালত। প্রথম যুক্তি হিসেবে আদালত বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ এবং সংবিধানের ৭-এর ‘খ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৌলিক স্তম্ভ পরিবর্তন করার কোনো বিধান নেই। কিন্তু ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি সংসদের হাতে তুলে দেয়, যা ছিল ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা থাকলেও সেখানকার সংস্কৃতিগুলো ভিন্ন। এমনকি এসব দেশে আমাদের দেশের মতো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নেই। যে অনুচ্ছেদে বলা আছে, দলের মতামতের বাইরে কোনো সংসদ সদস্য ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
তিন নম্বর যুক্তি হিসেবে আদালত বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ৬৩ শতাংশ দেশেই বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে নেই। শ্রীলঙ্কা ও ভারত দুটি ক্ষেত্রে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে রাখলেও তার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
চতুর্থত, বিচারক অদক্ষ হলেও অপসারণ করা যাবে না। তাহলে তা দেশের জন্য লজ্জাজনক হবে বলে মনে করেন আদালত।
পঞ্চমত, আদালত বলেন, বাংলাদেশে বিচারক নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই। কিন্তু অপসারণের নীতিমালা করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আগে নিয়োগের নীতিমালা ঠিক করা উচিত।
ছয় নম্বর যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে দেওয়ার ফলে বিচার বিভাগের ওপর খড়গ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বিচারকদের ওপর যদি এই খড়গ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তাহলে জনগণের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে। ন্যায়বিচারের নিয়ে তখন জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি হবে।
এই ছয়টি যুক্তি দিয়ে আদালত ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের ফলে সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল হলো। বরং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি বহাল রইল।