নির্বাচকদের পরিকল্পনাতেই ছিলেন না সাকিব
খারাপ সময় হয়ত একেই বলে। যেটা পার করছেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল, আলো ঝলমলে জ্যোৎস্নাময়, রাজনীতিতে পা রেখে তাতে নামিয়ে এনেছেন ঘোর অন্ধকার। রাজনীতির বেড়াজালে ক্রমেই ক্রিকেট থেকে দূরে সরে পড়েছেন। এবার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে জটিলতায় ছিটকে গেলেন আরও অনেকটা।
আইসিসির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নাম নেই সাকিবের। তার কারণ হিসেবে অনেকে বোলিং অ্যাকশনের ব্যর্থতা দাঁড় করালেও সত্যটা হলো এই, আসন্ন এ মেগা টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচকদের পরিকল্পনাতেই ছিলেন না দেশসেরা অলরাউন্ডার।
আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ১৫ সদস্যের দল ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রশ্ন ছুটে আসে সাকিবকে নিয়ে। প্রথমে বোলিং অ্যাকশনের ব্যাপার উল্লেখ করলেও পরে প্রধান নির্বাচক স্পষ্ট করেন তাদের পরিকল্পনাতে ছিলেন না সাকিব।
সাকিবকে নিয়ে প্রথম প্রশ্নে নির্বাচক জানান বোলিং অ্যাকশন জটিলতা নিয়ে। তিনি বলেছেন, 'আমরা জানি সাকিব এখন শুধু একজন ব্যাটার হিসেবে খেলতে পারবেন। দল নির্বাচনের সময় সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়েছে। আর আমাদের এই দলে শুধু ব্যাটার হিসেবে তাকে এই ১৫ জনের দলে নেওয়ার সুযোগ হয়নি।’
এরপরও ঘুরেফিরে সাকিব ইস্যুতে আরও প্রশ্ন। জানতে চাওয়া হয়, বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা না থাকলে সাকিব কি সুযোগ পেতেন? গাজী আশরাফের জবাব, 'দেখুন এত ওপেনলি একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে কেন দলে রাখা হয়নি সেটা আলাপ করা ভালো বিষয় না। তবে, এই মুহূর্তে যারা দলে আছেন তারা আমাদের সাথে আছে ও ক্রিকেটের মধ্যে আছে। তারা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলছে তাই তাদের ওপর আস্থা আছে। একজন ক্রিকেটার অবসর না নিলে সে দলের জন্য এভেইলেবল থাকে আমরা সবাই জানি। কিন্তু যখন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যার কথা আসে তখন আমরা অন্যকিছু নিয়ে ভাবিনি। আপনাদের কাছে আজকে যাদের নাম দিয়েছি তাদের সবার নামই কিন্তু আমরা আগে বোর্ডে জমা দিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনাতেই যেহেতু সাকিব আল হাসান ছিলেন না সেহেতু আপনি যে ব্যাপারটি জানতে চেয়েছেন (রাজনীতিগত ইস্যু) সেটির ব্যাপারে আলোচনার করার দরকার পড়েনি। যদি আমাদের দলে থাকতো তাহলে হয়ত এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনার দরকার পড়ত।'
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় নানা জটিলতায় যখন বিদ্ধ সাকিব তখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ালো বোলিং অবৈধ বোলিং অ্যাকশন
যা নিয়ে গেল কিছুদিন ধরে আলোচনায় সাকিব। ইংল্যান্ডের পর চেন্নাইতেও বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন দেশসেরা ক্রিকেটার। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর বোলিং করতে পারবেন না বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার।
এ ব্যাপারে গত রাতে বিসিবি জানায়, জাতীয় দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) অধীন প্রতিযোগতায় বোলিং করার নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। গত মাসে ভারতের চেন্নাইতে শ্রী রামচন্দ্র স্পোর্টস সায়েন্স সেন্টারে যার পুনমূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ায় সাকিবের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চিত করছে যে, পরবর্তী বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তার আগ পর্যন্ত বোলিং নয় শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলতে পারবেন সাকিব।
গত বছর সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন আম্পায়াররা। এ জন্য ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বার্মিংহামের লাফবোরো ইউনিভার্সিটিতে আইসিসি অনুমোদিত কেন্দ্রে অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। এরপর দ্বিতীয় দফায় চেন্নাইতে দিয়ে ব্যর্থ হন।
সুতরাং পরবর্তীতে আইসিসির মনোনীত সেন্টারে পরীক্ষা দিয়ে ছাড়পত্র পাওয়া না পর্যন্ত সাকিব শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন। তবে তিনি এর মাঝে বোলিং অ্যাকশন ঠিক করার জন্য কাজ করতে পারবেন।