কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার, বাড়ছে ভিড়
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে যেকোনো সময়। এ উপলক্ষে কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারাগারের সামনে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। কারাগারে সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি সেখানে রয়েছে।
কারাগারের সামনে কোনো ধরনের যানবাহন রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। গাড়িগুলো কারাগারের পাশে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ বিকেল পৌনে ৬টার দিকে কালো ব্রিফকেস হাতে জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে তাঁর সহকারী সিরাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির আইজি প্রিজনের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এসেছেন।
এদিকে বাংলাদেশ একাত্তর বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান নূর হোসেন (৬৭) এক হাতে ফাঁসির দড়ি আর এক হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে কারাগারের সামনে অবস্থান করছেন। ফাঁসির দড়ির মাঝে নিজামীর প্রতীকী ছবি রয়েছে।
রাজধানীর লালবাগ কেল্লার পাশে নূর হোসেনের বাড়ি। তিনি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে নিজামী আলবদর বাহিনীর নেতা হিসেবে বাংলাদেশের মা ও মাটিকে কলঙ্কিত করেছিল। তার ফাঁসি কার্যকর হলে দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।’
নিজামীর ফাঁসির প্রস্তুতি চলছে। যেকোনো সময় তাঁর ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। কারাসূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করতে জল্লাদ রাজু ও সহযোগীরা মহড়া শুরু করেছেন। ফাঁসি দেওয়ার আগে জামায়াত নেতাকে গোসল করানো হবে এবং জমটুপি পরিয়ে ফাঁসিমঞ্চে তোলা হবে। এ সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ওই সূত্র আরো জানায়, জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বেই নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হতে পারে। এর আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেছিলেন রাজু। এ ছাড়া জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ও সহযোগী ছিলেন রাজু।
গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় পড়ে শোনানো হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার কিছু পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়। পরে ৭টা ৫ মিনিটে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর রায়ের কপি নেন।
গত রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
গত ৫ মে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। পরে আপিলের রায়েও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ, ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি।