ফাঁসি হলো তৃতীয় সাবেক মন্ত্রীর
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও বাড়ি-গাড়িতে সদর্পে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রীর আসনে আসীন ছিলেন তাঁরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক দুই মন্ত্রী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের পর এবার তৃতীয় সাবেক মন্ত্রী হিসেবে একাত্তরের আলবদরপ্রধান মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দিবাগত ১২টা ১০ মিনিটে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
আর বহুল আলোচিত এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তৃতীয় সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটল। এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এরশাদ সরকারের মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
একইদিনে একই সঙ্গে একই ফাঁসির মঞ্চে পাশাপাশি ফাঁসি দেওয়া হয়েছে অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী একাত্তরের আলবদরপ্রধান,বিএনপি-জামায়াত সরকারের মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের মন্ত্রী। ছিলেন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিএনপির প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টাও। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে ছয়বার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে মুজাহিদ ছিলেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী।
গত ২১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো একইসঙ্গে পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় দেশের জন্য রচিত হয়েছিল একটি নতুন ইতিহাস।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিএনপি-জামায়াত সরকারের পর্যায়ক্রমে কৃষি এবং শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় কার্যকর করা হয়েছে।
তবে যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির রায়ের আগেই ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। ওই মামলায় তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকেও মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। অবশ্য সেই মামলার আইনি কার্যক্রম এখনো চলছে।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এই মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হল।
এই তিন মন্ত্রীর আগেও অনেক প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি পাননি কেউ।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমদ। তবে বিচারের আগেই মারা যান তিনি।
এ ছাড়া জেল হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, ওবায়দুর রহমান অভিযুক্ত হলেও মামলার রায়ে তাঁরা খালাস পেয়ে যান।
এর আগে বিভিন্ন সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুর্নীতির মামলায় অনেকের শাস্তি হলেও হত্যা বা এমন ধরনের অপরাধের মামলায় কাউকে মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।