মসজিদের মাইকে মাইকে অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর
তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল মসজিদের মাইকে মাইকে। এর আগে মার্শাল ল (সেনাশাসন) ঘোষণা করে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছিল। তবে এরদোয়ানের ডাকে এই কারফিউ ভেঙে অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে তুরস্কের জনগণ। বড় শহর ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তুর্কিরা জড়ো হয়েছে।
গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের আহ্বান জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানচেষ্টা রুখে দেওয়ায় বড় ভূমিকা রাখেন তাঁর সমর্থকরা।
তুরস্কের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, মোবাইল এপ্লিকেশনের সাহায্যে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের পর এরদোয়ানের বক্তব্য মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করা হয়। ফজরের নামাজের আগে অসময়ে মসজিদের মাইক সরব হতেই জনতা এই অভ্যত্থানচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পারে।
এ সময় অনেক মসজিদে জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারী সেনাবাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানানো হয়। এর আগে গণমাধ্যেমের কাছে দেওয়া বিবৃতিতে নির্বাচিত সরকারের প্রতি জনগণকে সমর্থনের আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংখ্যালঘু একটি অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে।’
রাস্তায় নামা তুর্কিরা সেনাবিরোধী স্লোগান দেন। অনেকেই ট্যাংকের ওপর উঠে বিক্ষোভ করেন। ইস্তাম্বুল ছাড়াও রাজধানী আঙ্কারাসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইনডিপেনডেন্ট আরো জানায়, পরিস্থিতির খারাপ হয়ে দাঁড়ানোয় পার্লামেন্ট ভবনের চার পাশে ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়া হয়েছে। সামরিক হেলিকপ্টার থেকেও আঙ্কারা শহরে গুলি ছোড়া হয়েছে।
তুরস্কের টেলিভিশনের এক ভিডিওতে দেখা যায়, বসফরাস ব্রিজের ওপর থাকা জনগণ গুলি থেকে বাঁচতে রাস্তায় শুয়ে পড়ে। এ সময় জোরে গুলির শব্দ শোনা যায়।
প্রযুক্তিবিষয়্ক ওয়েবসাইট এনগেজেট ও দ্য ভার্জ জানায়, গত শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলাকালীন সংকটময় মুহূর্তে আইফোনের ভিডিও কলিং অ্যাপ ‘ফেসটাইম’ ব্যবহার করে তুরস্কের টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-টার্ককে সাক্ষাৎকার দেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
নিজের অবস্থান অজ্ঞাত রেখেই এরদোয়ান ফেসটাইমের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, তিনি নিরাপদে রয়েছেন। তুরস্কের জনগণকে সরকারের সমর্থনে রাস্তায় নেমে যাওয়ার আহ্বান জানান এরদোগান। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জমায়েত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামেন তাঁর সমর্থকরা। ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং অস্ত্রসহ সেনারা রাস্তায় অবস্থান করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে পিছপা হননি তাঁরা। তুর্কিদের এই অবস্থান ও বিক্ষোভের কারণেই অনেকাংশে দুর্বল হলে পড়ে অভ্যুত্থানচেষ্টা। এতে জড়িত থাকা অনেক সেনাকে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। আবার জনরোষের সামনে আত্মসমর্পণ করেন অনেক সেনা।