আপনার সৃষ্টি কর্মটি চুরি হয়ে যাচ্ছে না তো?
রাজীব একটি মৌলিক গান তৈরি করেছেন। একজন প্রযোজক টাকার বিনিময়ে গানটির স্বত্ব কিনে নিয়েছেন। কিছুদিন পর বাজারে সেই গান অন্য আরো একজন গাইছে এবং তার গানটি বাজারে রাজীবের গানের চাইতে বেশি বিক্রি হচ্ছে। শুধু গান নয়, বইয়ের কিছু অংশ বা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এমন অনেক সৃষ্টি কর্ম চুরি হওয়ার কথা আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু চুরি হলে কী করা উচিত, সেটা কি জানি? সৃষ্টিকর্মের অধিকার নিশ্চিত করতেই একটি আইন আমাদের দেশে আছে যার নাম কপিরাইট আইন।
কপিরাইট আইনটি আসলে কী?
কপিরাইট হচ্ছে সেই আইন, যার দ্বারা যেকোনো মৌলিক সৃষ্টিকর্মের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একক অধিকার প্রদান করা হয় । তার মানে- একটি জিনিস যার সৃষ্টি, সেটি তার অনুমতি ছাড়া কোনো কপি বা নকল বাজারে প্রকাশ করে বিক্রি করা যাবে না।
কপিরাইট আইনের মাধ্যমে মূল শিল্পী বা লেখক অথবা কোনো বইয়ের প্রকাশককে নিজ খরচে কপিরাইট আইনে নির্দিষ্ট করা সময়ের মধ্যে একটি বা একাধিক কপি সরকার নির্ধারণ করা কিছু স্থানে বিনামূল্যে জমা দিতে হয়।
কপিরাইট কীভাবে করাবেন?
শিল্পকর্ম, বই, গান, সফটও্যার বা সিনেমা ইত্যাদির কপিরাইট নিবন্ধন করতে হলে যেতে হবে জাতীয় গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ ভবন (৩য় তলা), ৩২ এস এম মোরশেদ সরণি, আগারগাঁও, শেরে বাংলানগর, ঢাকা- এই ঠিকানায়। এই জায়গাতেই আপনাকে বিনামূল্যে কপিরাইটের আবেদনের ফরম দেওয়া হবে। ফরমটি পূরণ করে এর তিনটি কপি করে জমা দিতে হবে, এ ক্ষেত্রে ৬০০ টাকার ট্রেজারি চালান দিতে হয়। কোন ধরনের কাজের জন্য কপিরাইট চাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে ফি নির্ধারিত হবে। বইয়ের কপিরাইট চাইলে এর প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতিপত্র ও তাঁর সাথে প্রচ্ছদে কোনো শিল্পকর্ম থাকে তাহলে ২৫০ টাকার দলিলে তাঁর অনুমতি নিতে হবে।
পাণ্ডুলিপি, সাহিত্যকর্ম, রেকর্ডকর্ম, সিডি, ফিল্ম ও কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে দুই কপি করে কাজ জমা দিতে হবে। আর কোনো চিত্রকর্মের জন্য তিন কপি কাজ জমা দিতে হবে।
সব কিছু অনুসন্ধান করে কপিরাইটের কাজটি ৩০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করে জানানো হবে।
কতদিন পর্যন্ত সৃষ্টিকর্মের ওপর মালিকানা থাকে?
সৃষ্টিকর্মের ওপর স্রষ্টার কপিরাইট থাকে জীবিতকাল পর্যন্ত। স্রষ্টার মৃত্যুর ৬০ বছর পর্যন্ত উত্তরাধিকারীরা কপিরাইটের অধিকার ভোগ করবে।
কপিরাইট আইন ভঙ্গ করার শাস্তি কী?
কপিরাইট আইন ভঙ্গ করার জন্য শাস্তি আছে। কাউকে শাস্তি দেওয়ার আগে কিন্তু কপিরাইটের বিষয়টি স্রষ্টার নিশ্চিত করে রাখতে হবে। কেবল কপিরাইট করা থাকলেই কোনো লেখা বা সৃষ্টিকর্ম বিনা অনুমতিতে নকল করলে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয়ভাবেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। শাস্তি হিসেবে কপিরাইট আইন ভঙ্গকারীর চার বছরের জেল ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। সিনেমা বা ফিল্মের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। এ ছাড়া ফৌজদারি আইনের মাধ্যমেও ক্ষতিপূরণ ও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া যাবে।