আমি প্রেমের নাটক ভালো বানাই : আরিয়ান
তিনি তরুণ নাট্যনির্মাতা, নির্মাণ করেছেন একাধিক নাটক। নাটকে মূলত ভালোবাসার গল্পই বলেন তিনি, যার প্রমাণ প্রতিটি ফ্রেমে পাওয়া যায়। বলছি মিজানুর রহমান আরিয়ানের কথা। যাঁরা মাঝেমধ্যে নাটক দেখেন, তাঁরা নামটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে থাকবেন। নাটক নিয়ে তাঁর ভাবনা-চিন্তাসহ বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন : মিজানুর রহমান আরিয়ানকে যদি প্রেমের পরিচালক বলা হয়, তাহলে কি ভুল বলা হবে?
উত্তর : নাটকে আমি সাধারণত যে ধরনের গল্প বলার চেষ্টা করি, সেটাকে প্রেমের গল্প বলা যাবে কি না জানি না। আমার কাছে মনে হয়, আমি ভালোবাসার গল্প বলি। তবে প্রেম এবং ভালোবাসা যেহেতু একই ধরনের, সেহেতু আমাকে প্রেমের পরিচালক বলা যেতে পারে। আপনি দেখুন, প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া কিন্তু পৃথিবী চলে না।
প্রশ্ন : আপনার নাটকগুলো কাহিনী গড়ে ওঠে ছেলেমেয়ের প্রেম বা ভালোবাসাকে ঘিরে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আপনাকে নাটক নির্মাণ করতে দেখা যায় না, এর কারণ কী?
উত্তর : আমি কিন্তু আমার প্রথম ১১টি নাটক বিভিন্ন গল্পে বানিয়েছি। এর মধ্যে লাভ স্টোরি, কমেডি এবং অ্যাকশন থ্রিলার নাটক ছিল। সুতরাং আপনি আমাকে বলতে পারবেন না আমি শুধু প্রেম-ভালোবাসার মধ্যে পড়ে আছি। এখন যদিও প্রেমের নাটক নির্মাণ করছি, তবে গল্প বলার ক্ষেত্রে ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া আমার কাছে মনে হয়, আমি লাভ স্টোরি নিয়ে ভালো নাটক বানাতে পারি। আর আমি মনে করি, মানুষ লাভ স্টোরি দেখতে পছন্দ করে।
প্রশ্ন : প্রেমের নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে কি আপনার ভেতর প্রজন্মের অনুভূতিটা কাজ করে?
উত্তর : প্রেম-ভালোবাসা ব্যাপারটা সব জেনারেশনেই ছিল বা আছে। সেটা হতে পারে বর্তমান জেনারেশন কিংবা আগের জেনারেশন। আমি যদি আগের জেনারেশনের লাভ স্টোরি নিয়ে নাটক বানাই, সেটা মানুষ দেখবে। আবার এই জেনারেশনের লাভ স্টোরি নিয়ে নাটক বানাই, সেটাও মানুষ দেখবে। আরেকটি কথা, আমি কখনো নাটক আমার ভালো লাগার জন্য বানাই না। আমি অডিয়েন্সে বিশ্বাসী। আর এই অডিয়েন্সরা কিন্তু কোনো না কোনো জেনারেশনের।
প্রশ্ন : আপনি যেভাবে এই প্রজন্মকে ধরতে চাইছেন, তাতে কি সফল হচ্ছেন বলে মনে হয়?
উত্তর : একটি নাটক টেলিভিশনে অন-এয়ার হওয়ার পর যখন ইউটিউবে আপলোড করা হয়, তখন আমি ইউটিউবের ভিউয়ার্সদের কমেন্টগুলো পড়ি। যদি একশটি কমেন্ট হয়, তার ভেতর প্রায় পঁচানব্বইটি পজিটিভ কমেন্ট থাকে। এদিকটায় বিবেচনা করলে আমি মোটামুটি সফল।
প্রশ্ন : তাহলে ইউটিউবের ওপর কি নাটকের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে?
উত্তর : অনেকটা বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হচ্ছি। এ ছাড়া ইন্সট্যান্ট ফিডব্যাক পাওয়ার তো কোনো ওয়ে নেই। ইউটিউবে অনেক ধরনের লোক কমেন্ট করে। তাদের কেউ প্রবাসী, কেউ বুয়েট কিংবা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কেউ বা মফস্বলের। এই কমেন্টগুলো আমাকে নাটকের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
প্রশ্ন : অনেকে আজকাল অভিযোগ করেন, নাটকের মান ভালো হচ্ছে না। তা ছাড়া নাটক নির্মাণ করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। খরচের টাকা উঠে আসছে না। অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। তবে আমি আমার দিক থেকে যদি বলি, গত ১৭ থেকে ১৮টি নাটকে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও নাটক নির্মাণে থেমে নেই। ভালো কিছু করার জন্যই ক্ষতিটা হচ্ছে। বাজেট হয়তো কম থাকে। তার পরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার মতো অনেকে এমন চেষ্টা করছেন। আমি আশাবাদী, খুব শিগগির আবার নাটকের মান বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন : ভালো নাটক নির্মাণ হচ্ছে না। এর কারণ কি ডিরেক্টর সংকট?
উত্তর : আমাদের ভালো ডিরেক্টর সংকট আছে। তাই ভালো নাটক নির্মিত হচ্ছে না। হাতেগোনা কয়েকজন আছেন, যাঁরা ভালো নাটক নির্মাণ করছেন। এর পরিমাণটা বাড়াতে হবে। সামনে আরো নতুন চ্যানেল আসছে। প্রচুর ভালো নাটক প্রয়োজন হবে। দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। নতুন ভালো ডিরেক্টরদের আসা উচিত।
প্রশ্ন : ভালো নাটক না হওয়ার পেছনে কি একসঙ্গে একাধিক নাটক নির্মাণ করা দায়ী?
উত্তর : ধরুন, একটি ঈদে যদি আমি দুইটা নাটক করতে পারি, তাহলে নাটকের কোয়ালিটি ভালো হয়। যদি একসঙ্গে চার-পাঁচটা নাটক করতে যাই, তখন কোয়ালিটি মেইনটেইন হয় না।
প্রশ্ন : আগে যেখানে অভিনেতা-অভিনেত্রী থিয়েটার থেকে নেওয়া হতো, এখন সেখানে ফেসবুক সেলিব্রেটি আর ইউটিউব স্টারদের নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের প্রতি আগ্রহ দেখানোর কারণ কি নাটকের অনলাইন প্রচারণা পাওয়া নাকি অন্য কিছু?
উত্তর : আমি ফেসবুক সেলিব্রেটি নিয়ে কাজ করি না। আপনি চাইলে দেখতে পারেন। যারা এদের নিয়ে কাজ করছে, তারা কেন করছে আমি বলতে পারব না। কেউ যদি প্রচারের জন্য তাদের নিয়ে কাজ করতে চায়, তাতে গালি খাওয়ার ভয় থাকে। দেখা গেল অনলাইনে নাটকের প্রমো খুব প্রশংসা কুড়াল, তারপর পুরো নাটক দেখার পর যদি দর্শকের ভালো না লাগে, তাহলে গালিটা পরিচালকের দিকে আসে। প্রমো হিট হলেই যে নাটক হিট হবে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
প্রশ্ন : দেশে নির্মিত নাটক দেশের মানুষ দেখছে না। ভারতীয় সিরিয়াল তার বদলে ড্রয়িংরুম দখল করে আছে। এর পেছনের কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : প্রধান কারণ বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন প্রচারে চ্যানেলগুলো কোনো নিয়মনীতি মানছে না। এই ঈদে আমার দুটো নাটক ব্রেক ফ্রি অন-এয়ার হয়েছে। খুব ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। মানুষ দেখেছে নাটক দুটি। টিভিতেই দেখেছে, ইউটিউবে নয়। মানুষ দেশের নাটক দেখতে চায়। অথচ বিজ্ঞাপনের আধিক্য দেখার ইচ্ছাটা অবদমিত করে রাখছে। আমি মনে করি, ভারতের সিরিয়ালের চেয়ে আমাদের নাটকের গল্প শক্তিশালী। শুধু বিজ্ঞাপনটাই সমস্যা।
প্রশ্ন : আমাদের দর্শকের বিরাট একটি অংশ কিন্তু পরিবার। পরিবারই কিন্তু ভারতের সিরিয়ালে আসক্ত। কারণ, তারা পরিবারকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত-ভালোবাসা পর্দায় দেখতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য আপনার কোনো নাটক নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে কি না?
উত্তর : খুব শিগগির আমি সিরিয়াল নির্মাণের কাজে হাত দেব। আসলে এত দিন পছন্দমতো গল্প না পাওয়ার কারণে সিরিয়াল বানানো হয়ে ওঠেনি। তবে এবার চেষ্টা করব আমার সিরিয়ালের মাধ্যমে কিছু দর্শককে ফিরিয়ে আনতে। তাঁদের মধ্যে পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন।
প্রশ্ন : ভারতীয় কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনেকে দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, এতে দেশের নাটকের দর্শক আবার ফিরে আসবে। আপনার কি মনে হয় আসবে?
উত্তর : আসবে। তবে তাঁদের ধরে রাখার জন্য ভালো নাটক নির্মাণ করতে হবে।
প্রশ্ন : সেটা কতটা সম্ভব?
উত্তর : খুব সম্ভব। চাইলেই ভালো কিছু নির্মাণ করা সম্ভব। এখানে একটা সমস্যা আছে, সেটা হলো আমাদের দেশে সিরিয়াল নির্মাণের বাজেট খুব কম। এটা বাড়াতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব।
প্রশ্ন : এমন কোনো পরিচালক কি আছে, যার কাজ আপনার ভালো লাগে?
উত্তর : আছে অনেকে, যারা ভালো কাজ করছে। তারা ভালো কাজ করার চেষ্টা করছে। তাদের কাজ দেখে আমি সন্তুষ্ট বলতে পারেন।
প্রশ্ন : অনেকের অভিযোগ, এজেন্সিগুলোর কারণে নাটকের মান কমছে, তারা ঠিকমতো বাজেট দিচ্ছে না। এমন অভিযোগের সঙ্গে আপনি কতটা একমত?
উত্তর : এখন পর্যন্ত আমি এমন কোনো বাজেট জটিলতায় পড়িনি। তাই বলতে পারব না।
প্রশ্ন : এ তো গেল নাটকের কথা। আপনাকে চলচ্চিত্র নির্মাণে দেখা যাবে কি না?
উত্তর : চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সঠিক একটা সময় খুঁজছি। কয়েকটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট আছে আমার হাতে। আশা করি, প্রথম সিরিয়ালটি শেষ করার পরের বছরই সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেব। এখানে বলে রাখি, সিনেমাও করব লাভ স্টোরি নিয়ে। পিওর লাভ স্টোরি।
প্রশ্ন : টেলিভিশন ডিরেক্টরস গিল্ড নামে সংগঠনটি পুনরায় সংগঠিত করা হলো। নির্বাচনও হয়ে গেল। নাটকের মানোন্নয়নে সংগঠনটি কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর : আগে আমার মোবাইলের ফোনবুকে মাত্র দুজন ডিরেক্টর কলিগের নম্বর সেভ করা ছিল। এখন আছে ৫০ জনের মতো কলিগের নম্বর। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারছি। বিপদে সাহায্য চাইতে পারছি। এটা কিন্তু গিল্ডের কারণে সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনের দিন সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। আগে সংগঠনটি ব্যর্থ ছিল। এখন আমার মনে হয়, সংগঠনটির পুনরুজ্জীবনের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক কিছু হবে।