সুন্দরবন দিয়ে কয়লা পরিবহনেই মূল ঝুঁকি
বাগেরহাটের রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর পরিবেশে এর নেতিবাচক প্রভাব ও ঝুঁকি পাওয়া গেছে এক গবেষণায়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলনকক্ষে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর এ গবেষণার তত্ত্বাবধায়ন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) ।
রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে পরিবহন করলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হবে কি না সে বিষয়ে দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে তিনটি নৌপথ এবং ১৩টি নির্দেশনা মেনে চলাতে বলা হয়েছে।
যে তিনটি নৌপথ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো-পশুর নৌপথ : ফেয়ারওয়ে থেকে হিরণপয়েন্ট-আকরামপয়েন্ট-হাড়বাড়িয়া-মোংলা হয়ে রামপাল। শিবসা নৌপথ : ফেয়ারওয়ে থেকে হিরণপয়েন্ট-আকরাম পয়েন্ট-চুনকুরি-চালনা হয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মোংলা-ঘাষিয়াখালী নৌপথ : ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে বলেশ্বর, ঘাষিয়াখালী-মোংলা-পশুর-মোংলা বন্দর হয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
একইসঙ্গে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহনের জন্য দুই ধরনের জাহাজ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো কেপসাইজ জাহাজ ও হ্যান্ডিসাইজ জাহাজ।
আবহাওয়া ও ঋতুবৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে আমদানি করা কয়লা মাদার ভেসেলের মাধ্যমে ফেয়ারওয়ে বয়া এবং পশুর নদীর হারবরিয়া এলাকার মাজহার পয়েন্টে নেওয়া হবে এবং সেখান থেকে হালকা নৌযানের মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পরিবহন, খালাশ এবং সেখানকার ইয়ার্ডে সংরক্ষণ করা হবে।
এই প্রকল্পে মাদার ভেসেল থেকে হালকা নৌযান বা লাইটার ভেসেলে কয়লা স্থানান্তরের জন্য পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে যেন কয়ল নদীতে না পড়ে বা কয়লা ধুলার নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সিইজিআইএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, কয়লা পরিবহনের কারণে যেসব প্রধান বিপত্তি বা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার ভেসেলে কয়লা বোঝাই ও খালাসের সময়। এ ছাড়া পরিবহনের সময়ও বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, লিচেট বা দূষিত তরলের মাধ্যমে জাহাজের দেয়াল ক্ষয়ে যাওয়া, নদী তীর বা ডুবোচরে জাহাজ আটকে যাওয়া, অন্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কয়লা পানিতে পড়ে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দরবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
যেসব নৌপথ সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলোতে অধিক পরিমাণে জাহাজ চলাচলের কারণে ডলফিন, মাছ এবং বাস্তুসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এসব কারণে বারবারই পরিবেশবান্ধব উপায়ে কয়লা পরিবহনের কথা বলা হয়েছে।
গবেষণায় সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, সুন্দরবনের ভেতরের নদীগুলো দিয়ে অনেক বেশি জাহাজ চলাচলের কারণে মাছ এবং চিংড়ির বৃদ্ধিতে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল জনগণের জীবনেও প্রকল্পের প্রভাব দেখা যাবে। তবে প্রকল্পে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।
পশুর নৌপথে কয়লা পরিবহনে জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডলফিনের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে সমীক্ষা প্রতিবেদনে। সেজন্য প্রয়োজনীয় মনিটরিং পদ্ধতিও সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সমীক্ষা প্রতিবেদন উত্থাপন করেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল ভট্টাচার্য ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের কর্মকর্তা মালেক খান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।