গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন মাদারীপুর জেলার কয়েকজন। কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
তাঁদেরই একজন রামকৃষ্ণ মণ্ডল। পেশায় কাঠমিস্ত্রি রামকৃষ্ণ মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের বীরেন মণ্ডলের ছেলে। ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলায় তাঁর ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তবে এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো আর্থিক অনুদান পাননি তিনি। রামকৃষ্ণর চার মেয়ে ও দুই ছেলে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় রামকৃষ্ণর তিনটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও বর্তমানে এক মেয়ে দশম শ্রেণি ও দুই ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। কোনোরকমে অভাবের মধ্যেই চলছে তাঁদের সংসার। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী রামকৃষ্ণ গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর থেকে প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। ফলে নিয়মিত কাজ করতে পারেন না তিনি। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে ভীষণ কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। শুধু উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নয়, চোখ হারানো রামকৃষ্ণ সামান্য স্বীকৃতিটুকুও পাননি বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
ওই ঘটনায় আহত হন সাইদুল ইসলাম ও কবির হোসেন। সাইদুল কালকিনি পৌরসভায় ডিশলাইনের ব্যবসায়ী ও কবির হোসেন কালকিনিতে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। সাইদুল ও কবির একবার সরকারিভাবে সামান্য অনুদান যা পেয়েছেন, তা দিয়ে ব্যবসা করে কোনোরকম সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এখনো স্প্লিন্টার বয়ে চলা এই দুজনেরই উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
এদিকে, কবিরের বাঁ হাত ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাচ্ছে। তরকারি বেচে জীবন চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁর। সাইদুল মাথায়, বুকে, হাতে গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের কারণে ভারী কাজ করতে পারেন না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন আহতরা। সামান্য যে সাহায্যটুকু পেয়েছিলেন, তা জীবনমান উন্নয়নে কোনো কাজে আসেনি।
অন্যদিকে, কালকিনি পৌরসভার বিভাগদী গ্রামের মোহাম্মাদ আলী হাওলাদারের ছেলে হালান হাওলাদারের একটি পা গ্রেনেড হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে। আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাঁকে।
গ্রেনেড হামলার শিকার সাইদুল বলেন, ‘এখনো সেই ভয়াল স্মৃতি মনে পড়লে দুই চোখে ঘুম আসে না। কারণ, ঘুমালে দুই চোখে ভেসে আসে সেই ভয়াল চিত্র। তখন আর ঠিক থাকতে পারি না। ভয়ে শরীরটা শক্ত হয়ে যায়। চিৎকার করে উঠি আর বলতে থাকি—কে আছো, আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।’
আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসার টানে সে বছর ঢাকায় গিয়েছিলেন সমাবেশে যোগ দিতে। সেখানে গিয়েই ঘটে এই বিপত্তি।
শুধু সাইদুল নন, ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় আহত প্রত্যেকের স্মৃতিতে সেদিনের নারকীয় দৃশ্য আজো স্পষ্ট হয়ে আছে।
গ্রেনেড হামলায় আহত রামকৃষ্ণ সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা চান, চান স্বাভাবিক জীবনযাপন। তিনি সরকারি সহায়তার দাবি করেন। একইভাবে সহায়তা চেয়েছেন আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও।
এ সম্পর্কে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কামালউদ্দিন বিশ্বাস জানান, আহত ও নিহতদের পরিবারগুলোর সাহায্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন তিনি।
গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের চারজন নিহত হন। তাঁরা হলেন কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামপোল গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক লীগ নেতা নাসিরউদ্দিন, কালকিনি উপজেলার ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু, রাজৈরের সুফিয়া বেগম, একই উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী।