‘বাংলাদেশি’ মেয়ের অলিম্পিক জয়
রিও অলিম্পিকে যথারীতি ব্যর্থ বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। ‘জয়-পরাজয় নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’ আপ্তবাক্য মেনে রিও ডি জেনিরো থেকে শূন্য হাতে ফিরেছেন তাঁরা। তবু অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করার আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারেন বাংলাদেশিরা। রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে নেওয়া মার্গারিতা মামুনের শরীরে বইছে বাংলাদেশের রক্ত।
মার্গারিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়াপ্রবাসী। মা আনা রাশিয়ার মেয়ে। মায়ের আগ্রহে ছেলেবেলায় রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের চর্চা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়তে থাকে খেলাটার প্রতি, আসতে থাকে সাফল্যও। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সাতটি স্বর্ণপদক জিতে নেওয়া মার্গারিতা এবারই প্রথম অংশ নিলেন অলিম্পিকে। আর প্রথমবারেই স্বর্ণসাফল্য!
ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে অবশ্য তিনি নন, ফেভারিট ছিলেন আরেক রুশ ইয়ানা কুদ্রিয়াভ্তসেভা। তবে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কুদ্রিয়াভ্তসেভাকে দ্বিতীয় স্থানে রেখে মার্গারিতা জিতে নিয়েছেন স্বর্ণ। হুপ, বল, ক্লাবস আর রিবন রুটিনে দুর্দান্ত পারফর্ম করা মার্গারিতা ৭৬.৪৮৩ পয়েন্ট স্কোর করেছেন। রুপাজয়ী কুদ্রিয়াভ্তসেভার পয়েন্ট ৭৫.৬০৮।
বাবা বাংলাদেশি বলে রাশিয়ার জিমন্যাস্টিকস অঙ্গনে মার্গারিতার আরেক নাম ‘বাংলার বাঘিনী’। তাঁর সৌজন্যে অলিম্পিকে এই ইভেন্টে টানা পঞ্চম স্বর্ণ উপহার পেয়েছে রাশিয়া। যদিও রিও ডি জেনিরোতে জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য পেয়ে তিনি নিজেই ভীষণ অবাক, ‘আজকের স্বর্ণপদক জয় আমার কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। কারণ, আজকের আগে ইয়ানা আমাকে প্রত্যেকবার অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে হারিয়েছে। তাই আজ স্বর্ণ জয়ের কথা ভাবতেই পারিনি।’
জুনিয়র পর্যায়ে একটি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মার্গারিতা। ছোটবেলায় বাংলাদেশে কয়েকবার এসেওছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসাও অসীম, ‘বাংলাদেশে আমার অনেক ভক্ত আছে আর তারা আমাকে সমর্থনও দিয়েছে। সে জন্য আমি খুব খুশি। আমি বাংলায় ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে পারি। ছোটবেলায় বাবা আমাকে বাংলা শেখাতেন। এখন অবশ্য সব ভুলে গেছি।’
অতীতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেও এখন তিনি কেন শুধুই রাশিয়ার? বাবা, মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে মস্কোতে বাস করা মার্গারিতার জবাব, ‘আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। তাই জুনিয়র পর্যায়ে একটি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তার পর রাশিয়ায় ফিরে এসেছি। কারণ, আমি রাশিয়ায় থাকি আর প্রশিক্ষণও নিই এখানেই।’