রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রাষ্ট্রবিরোধী : খালেদা জিয়া
সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে গণবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী উল্লেখ করে এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য আরো অনেক জায়গা আছে, কিন্তু সুন্দরবন একটাই।
ভারত তার নিজের দেশে এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন না দিলেও ‘সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থে’ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি সুন্দরবনের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
আর এতে ভারতেরই লাভ হবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এর (প্রকল্পের) ১৫ শতাংশ অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশের পিডিবি, ১৫ শতাংশ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি, বাকি ৭০ শতাংশ ব্যাংকঋণ নেওয়া হবে।
কোম্পানি বন্ধ হলে বা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।’
‘উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিডিবি কিনবে। আর নিট যে লাভ হবে তা ৫০ শতাংশ হারে পিডিবি ও এনটিপিসির মধ্যে ভাগ হবে। কিন্তু ১০০ শতাংশ পরিবেশ ধ্বংস হবে শুধুই বাংলাদেশের’, যোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছে দেশের বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতার কথা বলেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
গত সোমবারই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘পরিবেশকে দূষিত করে রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা চলছে, এটার আমরা বিরোধিতা করেছি। আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ আমাদের দরকার, কিন্তু সেটা অবশ্যই আমার সুন্দরবনকে বাদ দিয়ে করতে হবে।’
তার দুদিন পরেই আজ এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এলেন দলের চেয়ারপারসন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সুন্দরবনের এত কাছে পশুর নদীর তীরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য বলে ঘোষিত সুন্দরবন। এই বনের বিরল প্রজাতির পশুপাখি, বনের ভেতর ও আশপাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী ও খালের মৎস্য সম্পদ ও বিপুল বনজ সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার যে আশঙ্কা বিজ্ঞানীরা করেছেন, তার প্রমাণ অসংখ্য।’
খালেদা জিয়া এ প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।