শোক
এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম, আবার দেখা হবে
মাহমুদ হাসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় এনটিভি অনলাইনের ভ্রমণ পাতার সূত্র ধরে। ফেসবুক পেজে আমি ‘বেড়াই বাংলাদেশ’ নামে একটা পাতা দেখলাম। ভ্রমণবিষয়ক পেজটি দেখে আমার ভালো লাগল। তারপর আমি হাসান ভাইয়ের ফোন নম্বর চাইলাম। উনি ফোন নম্বর দিলেন। এরপর তাঁকে আমি আমাদের অফিসে আমন্ত্রণ জানালাম। ভাই এলেন, আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি হাসান’। ব্যস এ পর্যন্ত।
এরপর আমি হাসান ভাইকে যতবারই ফোন করতাম, ততবারই তিনি আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলতেন। আর আমি কাজের সুবাদেই তাঁর কাছে লেখা চাইতাম। তিনি দেরি না করে দু-একদিনের মধ্যে আমাকে লেখা পাঠিয়ে দিতেন।
হাসান ভাই একদিন বললেন, ‘চলেন, স্বরূপকাঠি ঘুরে আসি।’ আমি রাজি হয়ে গেলাম। আগস্টের ২০ তারিখের পর যাওয়ার কথা ছিল। একদিন শুনি হাসান ভাই আমেরিকা যাচ্ছেন। আমি দেরি না করে তাঁকে ফোন দিলাম। ভাই বললেন, ‘আমেরিকা গিয়ে আপনাদের লেখা পাঠাব।’
আমেরিকা গিয়ে হাসান ভাই ঠিকই আমার মেইলে ‘বাতাসের শহর’ শিরোনামে একটি লেখা পাঠালেন। আমেরিকা থেকে ফিরে আমাদের অফিসে একদিন এলেন হাসান ভাই। আমার জন্য উপহার হিসেবে সাবান আর কিছু চকলেট আনলেন। এরপর অনেকদিন হয়ে গেল। একদিন শুনি, হাসান ভাই হাসপাতালে। এ পর্যন্তই জানা ছিল আমার। তারপর আরেকদিন ফোন দিলাম ভাইকে। তিনি সেদিন হাসপাতাল ছাড়ছিলেন।
হাসান ভাই আমাকে বললেন, ‘ভাই এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। আপনার সাথে দেখা হবে।’ আজ সকালে অফিসে এসে ফেসবুক পেজ আর রনি ভাইয়ের ফোন পেয়ে আমি হাসান ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাই। এরপর আমি ‘বেড়াই বাংলাদেশ’-এর অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিরপুরের কাজীপাড়ায় হাসান ভাইয়ের বাড়িতে যাই। বাড়ির সামনে লাশবাহী গাড়িতে নীরব-নিথর হাসান ভাইকে দেখলাম। পাশে বাবা-হারানো সন্তানের আবেগ জড়ানো কান্না আর বিলাপ, ‘বাবা তুমি একবার উঠ। বাবার নাকের তুলাগুলো খুলে ফেলো। বাবা তুমি একবার কথা বলো।’
আর আমি পেছনে দাঁড়িয়ে। একদিকে হাসান ভাইয়ের সন্তানের কান্না, অন্যদিকে হাসান ভাইয়ের নীরব, নিথর দেহখানির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। চলে আসার সময় মনে মনে বলতে থাকলাম, ভাই এ যাত্রায় আপনি চলে গেলেন। কিন্তু আপনার সঙ্গে দেখা হবে অন্য কোনোখানে। ধীরে ধীরে হাসান ভাইয়ের প্রিয় মুখখানি ধূসর হয়ে গেল। আর মাঝে পড়ে থাকল কিছু স্মৃতি।