বিজ্ঞাপনেও সেন্সরশিপ জরুরি : তপু খান
তরুণ নাট্যনির্মাতা হিসেবে তপু খান বেশ পরিচিত। সুনির্মাতা হিসেবেও তিনি প্রতিষ্ঠিত সমালোচক মহলে। নাটক নির্মাণের পাশাপাশি তিনি নির্মাণ করছেন বিজ্ঞাপন এবং মিউজিক ভিডিও। নিজের বর্তমান কাজ এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন : শুনলাম জ্বর। কেমন আছেন এখন?
উত্তর : কিছুটা ভালো। আসলে টানা এক-দেড় মাস কাজ করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তবে আশা করছি, খুব শিগগির পুরো ভালো হয়ে আবার কাজ আরম্ভ করতে পারব।
প্রশ্ন : কাজের প্রসঙ্গ যখন এলো তখন নতুন কাজের কথা বলুন।
উত্তর : সাকিব আল হাসানকে নিয়ে একটি বিজ্ঞাপন করলাম। এ ছাড়া একক নাটক এবং মিউজিক ভিডিও করছি। তবে আপাতত সিরিয়াল করছি না।
প্রশ্ন : বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ে ইদানীং বেশ কিছু অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর : আমিও বিষয়টি খেয়াল করেছি। আমি মনে করি, অভিযোগ আসা উচিত। আমি সরাসরি নাম বলতে চাই না বিজ্ঞাপনের। কিছু বিজ্ঞাপনে এমন সব ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা প্রচারমাধ্যমে প্রচার করার অনুপযোগী। শুধু তাই নয়, সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সেন্সরশিপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন?
উত্তর : নাটকে যেমন প্রিভিউ কমিটি থাকে, চলচ্চিত্রে যেমন সেন্সরশিপ রয়েছে, তেমনি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এমন সেন্সরশিপ জরুরি। জানি না এমনটা আছে কি না। থাকলে তাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে।
প্রশ্ন : ঈদের নাটকের দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
উত্তর : খুব ভালো দর্শক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অনেকে প্রশংসা করেছেন। তিনজন নায়িকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁদের ঈদের সেরা কাজ সম্পর্কে। তাঁরা হলেন তারিন, তিশা ও পূর্ণিমা। তিনজনেরই সেরা কাজের তালিকায় আমার নাটকের নাম ছিল। এটা আমার জন্য বড় একটি অর্জন বলতে পারেন।
প্রশ্ন : সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন। সেইসঙ্গে এ প্রজন্মের তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন। এ দুই প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর : দুই প্রজন্ম নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারণ। আমি আফজাল হোসেন, জাহিদ হাসানের মতো সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছি। অনেকে বলেন, সিনিয়র শিল্পীরা নাকি ঠিকমতো সেটে আসেন না, শিডিউল ফাঁসান কিংবা পরিচালকের কথামতো অভিনয় করতে চান না। আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। আমি এদিক থেকে খুবই হ্যাপি। আবার তরুণদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাও দারুণ। তাঁদের ভেতর কাজ শেখার প্রবণতা আমি লক্ষ করেছি।
প্রশ্ন : দুই প্রজন্মের মধ্যে কোনো পার্থক্য?
উত্তর : পার্থক্য তো কিছু থাকবেই। তবে আমার মনে হয়, খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে তরুণদের কেউ কেউ সিনসিয়ারিটি সম্পর্কে সচেতন নন। তা ছাড়া এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। অনেকে চান, নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাইলাইট করতে। এখন কেউ যদি শুটিং করতে এসে ফেসবুকে সময় বেশি দেন, তাহলে তো হবে না। যদিও আমার সেটে এমনটি হয়নি। আসলে এটি সেট টু সেট ভেরি করে।
প্রশ্ন : নাটকের বর্তমান অবস্থা কেমন এখন?
উত্তর : নাটকের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো। আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন : নাটকের গল্প নিয়ে একটা অভিযোগ প্রায় শোনা যায়। আপনি আপনার নাটকের গল্পের ক্ষেত্রে কতটা সচেতন?
উত্তর : নাটকের গল্প ভালো হচ্ছে না, এটা সত্য। তবে আমি এ মুহূর্তে নাম মনে না আসা পারস্যের একজন সাহিত্যিকের একটি কথা উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে তিনশ রকম গল্প আছে। এই তিনশ রকম গল্প লেখা শেষ। এখন পৃথিবীতে যত গল্প আসবে, সব এই তিনশ গল্প ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আসবে।’ সে ক্ষেত্রে এখন একই গল্পের অনেক নাটক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখানো হয় নাটকে। এটা আসলে পরিচালকের ওপর নির্ভর করে যে তিনি কীভাবে দেখছেন গল্পটাকে! যেহেতু ঘুরেফিরে শুধু চরিত্রের নামবদল করে একই গল্পে নাটক নির্মিত হচ্ছে, সেহেতু পরিচালকদের অবশ্যই এ বিষয়ে আরো মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে হবে। চ্যানেলগুলোর উচিত এ বিষয়ে মনিটর করা।
প্রশ্ন : শুধু কি চ্যানেলগুলো মনিটর করলে এ সমস্যার সমাধান হবে?
উত্তর : শুধু চ্যানেল নয়, রাইটার ও ডিরেক্টরকে খুব বেশি সচেতন হতে হবে। এখানে তাদের দায়বদ্ধতা বেশি। সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে এ বিষয়ে নজর রাখে, তাহলে আমার মনে হয় এই সমস্যার সমাধান হবে।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে বাজেট কি গল্পের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে?
উত্তর : বাজেট একটি বড় সমস্যা আমাদের। একটি ভালো গল্পে যা ডিমান্ড করে, তার বাজেটের কারণে কমিয়ে ফেলা হয়। ধরুন, গল্পে আছে এয়ারপোর্টের দৃশ্য। দেখা গেল এয়ারপোর্টের পারমিশন নিতে অনেক টাকা লাগবে, তখন বাজেটের কথা চিন্তা করে এয়ারপোর্টের জায়গায় রেলস্টেশনের দৃশ্য দেখানো হয়। এখানেই গল্পগুলো মার খেয়ে যায়।
প্রশ্ন : সিনেমা নির্মাণের কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
উত্তর : অবশ্যই আছে। আমি শুধু টিভি নাটকে আবদ্ধ থাকতে চাই না। আমি সিনেমা নির্মাণের জন্য সঠিক সময়ে অপেক্ষায় আছি। সঠিক সময় এলেই কাজ আরম্ভ করে দেব।