চীনের প্রেসিডেন্ট আসছেন আজ
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ শুক্রবার বাংলাদেশে আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির নেতার এ সফরকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রায় তিন দশক পর চীনা কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। শি জিনপিংকে বরণে যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। তাঁর সফরকে ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলে অভিহিত করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সফরে সম্ভাব্য ২৫টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সফর দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা জানাবেন। বাংলাদেশ আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর দুটি জেট চীনের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমানকে এসকর্ট করে নিয়ে আসবে। তাঁকে এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমানটি আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ২১ বার তোপধ্বনির পর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেবে।
পরে চীনের প্রেসিডেন্ট ডায়াস থেকে সালাম গ্রহণ করবেন। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে গার্ড পরিদর্শন করবেন। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে চীনা প্রেসিডেন্টকে হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হবে।
শি জিনপিং বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দুই নেতা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবেন। এর পর বিকেল ৫টায় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে হোটেল লা মেরিডিয়ানে বৈঠক করবেন।
শি জিনপিং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিকেল ৪টায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে চীনা প্রেসিডেন্ট রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সকাল ১০টায় ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন।
ঢাকা সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্টের ১৩ সদস্যের সফরসঙ্গীর পাশাপাশি ৩৩ সদস্যের সরকারি কর্মকর্তা এবং ৩৪ সদস্যের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা থাকবেন।
১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট লি জিয়ান নিয়ানের বাংলাদেশ সফরের দীর্ঘ তিন দশক পর কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
শি জিনপিংয়ের সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির পলিটব্যুরোর (সিসিসিপিসি) সদস্য ওয়াং হুনিং, সিসিসিপিসির সদস্য সচিব লি জান শু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েছি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং জি, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনমন্ত্রী (এনডিআরসি) জু শাওসি, অর্থমন্ত্রী লো জিয়েই, বাণিজ্যমন্ত্রী হু চেং, চীনের পিপলস ব্যাংকের গভর্নর ঝো জিয়াওচুয়ান, আর্থিক ও অর্থনীতিবিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক লিউ হে, সিসিপিসির জেনারেল কার্যালয়ের নির্বাহী উপপ্রধান ডিং জুজিয়াং, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিগকিয়াং, সিসিসিপিসির জেনারেল কার্যালয়ের উপপ্রধান ওয়াং শাওজুন এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং জুয়ানইউ।