বিচারক অপসারণে আইনি শূন্যতা আছে : অ্যাটর্নি জেনারেল
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণে আইনি শূন্যতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ কথা জানান তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে পাস হওয়া ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করছে বলে আমি মনে করি। কারণ, এখন তো এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা মনে করেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগের নির্দেশনাই বাস্তবায়িত হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের সময় বিচারপতি অপসারণের আইনটা রেখে দেওয়া হয়েছিল, এটা জনকল্যাণমূলক এ কথা বলে। যখন আমরা রিভিউ করলাম, রিভিউতে আদালত বলল, সামরিক শাসনের যত আইন ও সংশোধনী আছে সব বাতিল হবে। সেই রিভিউর রায়ের আলোকেই আমি মনে করি, ষোড়শ সংশোধনীর দ্বারা বিচারপতির অপসারণের ক্ষমতা মূল সংবিধানে যা ছিল, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এই রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল করার ঘোষণাও দেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট এটাকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। দুজন বিচারপতি বলেছেন এটা অবৈধ, একজন বলেছেন বৈধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই আপিল বিভাগে আপিল করব। এক মাসের মধ্যে আমরা করতে পারব বলে মনে হয়।’
আপিলে রাষ্ট্রপক্ষ ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বলেও উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্টের হাতে। আমাদের পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়। এ নিয়ে আইয়ুব খান যেটা করেছিল, এই বিধানটাও অনেকটা তাই। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের যে ত্যাগ, সংগ্রাম ও চেতনা, সবই বৃথা হয়ে যায়। আমরা হাইকোর্টের রায় যাতে পরিবর্তন হয়, সেটা করার চেষ্টা করব।’
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী করা হয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে চলতি বছর ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।