‘মালাউন’ বলছি প্রমাণ দিলে মন্ত্রিত্ব ছাড়ব : ছায়েদুল
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়েরর লোকদের কটূক্তি করে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলেছেন এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি শিশুও একথা বিশ্বাস করবে না যে, আমার নিজ নির্বাচনী এলাকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে আমি হিন্দুদের গালিগালাজ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানি দেব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার এক সপ্তাহ পর আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব কথা বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছায়েদুল।
উপজেলা সদরের আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী দাবি করেন, পাশের উপজেলা মাধবপুর থেকে ১৪টি ট্রাকে করে হাফ-প্যান্ট পরা ইয়ং লোকজন এসে নাসিরনগরে এই হামলা চালিয়েছে। সেখানকার এক মুয়াজ্জিন মাইকে ডেকে এসব লোকদের জড়ো করেন।
ভুক্তভোগীরা মিছিল থেকে মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ করলেও ছায়েদুল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সেদিন কলেজ মোড় এবং নাসিরনগর হাই স্কুল মাঠে যে দুটি সমাবেশ হয়েছে, সেগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ। সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং হুজুররাও কোনোরকম দেবতা ভাঙচুর করেনি।
‘বিএনপি-জামায়াত চক্র শেখ হাসিনার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি নষ্ট করার জন্য এ কাজ করেছে’- উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধেই আমার হিন্দু ভোটারদের ক্ষ্যাপিয়ে তুলতে আমার শত্রুপক্ষ এ ষড়যন্ত্র করছে। সারাদেশ শান্ত থাকলেও এক উড়ো খবরের ভিত্তিতে শুধু নাসিরনগরেই আগুন জ্বালানো হচ্ছে।’
নিজের নির্বাচনী এলাকা হওয়ার পরও হামলার চারদিন পর কেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আসলেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, তিনি এলাকায় না এলেও ঢাকায় বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘রানা দাশগুপ্ত নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি শোনা কথার ভিত্তিতে এই গুরুতর অভিযোগ করেছেন। অথচ তাঁরা বিষয়গুলো সামাল দিতে আমার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টাই করেননি। মিথ্যা অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়ে, দাঙ্গাকে উসকে দিয়ে তাঁদের ঢাকায় চলে যাওয়া একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে আছে।’
গত ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার) নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামের এক যুবক পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরের দিন রোববার উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের কয়েকটি মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কাজল দত্ত ও নির্মল দত্ত বাদী হয়ে গত সোমবার নাসিরনগর থানায় দুটি মামলা করেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। চারদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই নাসিরনগর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার দুটি ঘর ও দক্ষিণপাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে দুটি পাড়ার গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এরপর শুক্রবার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ।
আজ রোববার পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত তিনদিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৩ জনকে। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদকে নাসিরনগর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।