নগর জীবনে শীতের পিঠা
ঋতুর পালাবদলে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আবার চলে এলো শীতকাল। যদিও নগর জীবনে এখন পর্যন্ত শীত খুব একটা অনুভূত না হলেও মৃদু শীতল হাওয়া এরই মধ্যে শীতের আমেজ সৃষ্টি করেছে। সাধারণত শীতের এই আমেজকে ভিন্ন মাত্রা দান করে শীতের পিঠা। শীতের পিঠার সাথে বাঙালির সম্পর্ক চিরন্তন। এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা ছাড়া শীতের পিঠা ছাড়া শীত পূর্ণতা পায় না। নগর জীবনের কর্মব্যস্ততায় ঘরে পিঠা বানানোর সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না, এ কারণে পিঠার দোকানকে বেছে নেন অনেকে।
বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ রকমের শীতের পিঠা রয়েছে। যদিও এর ভেতর ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, নকশী পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, দোল পিঠা, পান পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি, ছানাবড়া, নারকেল মুড়িসহ ৩০ রকমের পিঠাই বেশি বানানো হয়। এগুলোর মধ্যে ভাপা এবং চিতই পিঠা বেশি জনপ্রিয়।
শীতকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মোহাম্মদপুর, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিভিন্ন রকম সুস্বাদু পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুর হাজি মকবুল কলেজের সামনে পিঠা বিক্রি করেন সামাদ মিয়া। পিঠা বিক্রি সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন,‘বিক্রি বেশ ভালো। শীত তো এখনো সেভাবে পড়েনি,পড়লে বিক্রি আরো বাড়বে।’
সামাদ মিয়ার দোকান থেকে প্রায়ই পরিবারর জন্য পিঠা কিনে নিয়ে যান সরকারি চাকরিজীবী ফরিদা বেগম। দোকান থেকে পিঠা কেনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘চাকরি করার কারণে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সময়ের অভাবে তাই দোকান থেকে কিনে খাই। তবে শীতের ছুটিতে গ্রামে গেলে পরিবারের সবার সাথে মিলে শীতের পিঠা বানিয়ে খাই।’
পিঠার দাম সহনীয় কি না প্রশ্ন করলে ফরিদা বেগম উত্তরটা এভাবে দেন, ‘ফুটপাত থেকে কিনলে একরকম দাম, আর বড় সাজানো গোছানো রেস্টুরেন্ট থেকে কিনলে আরেক রকম দাম। এই ধরুন এখানে ভাপা পিঠা ১০ টাকা, কিন্তু ওখানে সেটা বেড়ে ১৫-২০ টাকা। দোকান ভেদে দাম বাড়ে কমে। যদিও ফুটপাতের খাবার খাওয়া ঠিক নয়। তবুও দামে সস্তা হওয়ার কারণে খেতে হচ্ছে।’
দিনের বেলা পিঠা খুব একটা বিক্রি না হলেও সন্ধ্যার পর সাধারণত মানুষের ভিড় দেখা যায় দোকানগুলোতে। ব্যস্ততার কারণে যারা এখনো শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পারেননি তাঁরা সময় করে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন পিঠার দোকানে। সাধ্যের মধ্যে পছন্দের শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পারবেন এখানে।