বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় উৎসর্গ করলেন আইভী
বহুল প্রতীক্ষিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিদলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে সাড়ে ৭৯ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে পুনরায় মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তাঁর এ বিজয় উৎসর্গ করেছেন সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট-উৎসব। কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার ঘোষণা করেন, ‘১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকটি ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট, অপরদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।’
পৌনে পাঁচ লাখ ভোটারের মধ্যে এবার ভোট দিয়েছেন দুই লাখ ৯৬ হাজার ৩৬ জন। এবার ভোট বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১৭১ ভোট। নির্বাচনে ৬২ দশমিক ৩৩ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। গতবার এ হার ছিল ৬৯ শতাংশ।
জয়ের পর নগরীর দেওভোগে হাজারো কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে নিজের মিডিয়া সেলের সামনে এক প্রতিক্রিয়ায় সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘অগণিত মানুষের ভালোবাসা আর আস্থার কারণে এই বিজয় সম্ভব হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আস্থার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জবাসীকে নৌকা দিয়েছিলেন, সেই নৌকার মান নারায়ণগঞ্জবাসী রাখতে পেরেছে বলে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং এই বিজয় আমি উৎসর্গ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। যারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি। যারা বেঁচে আছেন সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এই বিজয় উৎসর্গ করলাম।’
ভোটগ্রহণ শেষে আইভীর কর্মী-সমর্থকরা মিডিয়া সেলের সামনে জড়ো হচ্ছিলেন। একেকটি কেন্দ্রের ফলাফল যখনই আসছিল তখনই সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদম রসুল এ তিনটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আইভী বিলুপ্ত হওয়া নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই নির্বাচনে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে মাঠ ছেড়ে যান বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি ভোট পান প্রায় সাত হাজার।
এবার দলের মনোনয়ন পান আইভী। আগের প্রতিদ্বন্দ্বী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তাঁর পক্ষে থাকার কথা জানান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী এই নির্বাচনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সমর্থনও পেয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলন করে আইভীকে সমর্থনের কথা জানান।
আইভীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জের এক রাজনৈতিক পরিবারে আইভীর জন্ম। বাবা আলী আহমেদ চুনকা ছিলেন স্বাধীনতা উত্তরকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম চেয়ারম্যান। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৮২ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চিকিৎসাবিদ্যায় পড়শোনার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে রাশিয়ায় চলে যান। সেখানে ওদিসা পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯২ সালে এমডি ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন। পরে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ইন্টার্নশিপ করেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জে ২০০ শয্যা হাসপাতালে কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য নিউজিল্যান্ডে চলে যান। ২০০২ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বিপুল ভোটে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন সময়ে নারায়ণগঞ্জ নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা শাখার আহ্বায়ক।