কাউন্সিলর পদে বেশি জয় পেয়েছে বিএনপি-সমর্থিতরা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও সাধারণ কাউন্সিলর পদে বেশি ওয়ার্ডে জিতেছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরাই।
বৃহস্পতিবার দিনভর শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে রাতে এ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ১২টি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন। বিপরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১১টি ওয়ার্ডে। জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী জিতেছে তিনটি ওয়ার্ডে আর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিন মেয়র পদ ও ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছাড়াও নয়জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে এবারই প্রথম মেয়র পদপ্রার্থীরা জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাঁদের দলের কাছ থেকে সমর্থন পেলেও আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই প্রতীক পাননি। তাঁদের লড়তে হয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতীকে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে শতকরা প্রায় ৭৯ ভাগ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রের গোটা শহরজুড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় ভোট-উৎসব। কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ করা হয়। পৌনে পাঁচ লাখ ভোটারের মধ্যে এবার ভোট দিয়েছেন দুই লাখ ৯৬ হাজার ৩৬ জন। এবার ভোট বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১৭১ ভোট। নির্বাচনে ৬২ দশমিক ৩৩ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। গতবার এ হার ছিল ৬৯ শতাংশ।
ভোট গণনা শেষে সন্ধ্যার কিছু পর থেকে ফল আসতে শুরু করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখান থেকেই ফল ঘোষণা করা হয়। মেয়র পদের ফল ঘোষণার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বেসরকারিভাবে বিজয়ী বিএনপির কাউন্সিলরা হলেন—২ নম্বর ওয়ার্ডে ইকবাল হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইসরাফিল প্রধান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জমশের আলী ঝন্টু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মো. শওকত হাসেম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাকসুদুল আলম খোরশেদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম নবী মুরাদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হান্নান সরকার, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. এনায়েত হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সামছুজ্জোহা ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
বেসরকারিভাবে বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা হচ্ছেন—১ নম্বর ওয়ার্ডে হাজি মো. ওমর ফারুক, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. শাহজালাল বাদল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনিসুল হক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মতিউর রহমান মতি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আলী হোসেন আলা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রুহুল আমিন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ইফতেখার আলম খোকন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নাজমুল আলম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আবদুল করিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কবির হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল মোহাম্মদ সাগর।
এ ছাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শফিউদ্দিন প্রধান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুদ্দিন আহমেদ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে আফজাল হোসেন জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
আর বাসদের প্রার্থী অসিত বরণ বিশ্বাস বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে।
বেসরকারিভাবে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন—১ নম্বর ওয়ার্ডে (১, ২, ৩) মাকসুদা মোজাফফর, ২ নম্বর ওয়ার্ডে (৪, ৫, ৬) মনোয়ারা বেগম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (৭, ৮, ৯) আয়েশা আক্তার দিনা, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (১০, ১১, ১২) মিনু আরা বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (১৩, ১৪, ১৫) মোছাম্মাৎ শারমিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (১৬, ১৭, ১৮) আফসানা আফরোজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে (১৯, ২০, ২১) শিউলি নাওসাদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে (২২, ২৩, ২৪) শাওন অঙ্কন ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে (২৫, ২৬, ২৭) হোসনে আরা।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট, অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। অর্থাৎ সাড়ে ৭৯ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হলেন আইভী।
এ ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয় রাজধানীর পাশে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা একসময়ের প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত শীতলক্ষ্যাপাড়ের এ শিল্পনগরীর দ্বিতীয়বারের ভোটযজ্ঞ।