সালতামামি ২০১৬
টলিউডের সাতকাহন
ওপারের বাংলা চলচ্চিত্র বদলে গিয়েছে অনেকটা। বাজেট বেড়েছে। নির্মাণে বৈচিত্র্য এসেছে। কারিগরি দিক থেকে উন্নত হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন দর্শক সৃষ্টি হয়েছে। ভাষার মিল থাকায় আগে যেখানে একটা সময় তাদের বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ওপর নির্ভর করতে হতো, এখন সেটা করতে হয় না। বরং এখন তাদের চেষ্টা, কৌশলে বাংলাদেশের বাজার দখল করা।
পশ্চিমবঙ্গের দর্শক এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বাণিজ্যিক ছবি দেখছে। অন্য ভাগ বিকল্প ধারার ছবি দেখছে। বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে যে কটি বাণিজ্যিক ছবি মুক্তি পেয়েছে তার প্রায় সবকটি চলচ্চিত্র দক্ষিণ ভারতের ছবির কাহিনী নিয়ে নির্মিত। পাশাপাশি বিকল্প ধারার ছবিগুলো বিষয়ভিত্তিক হওয়ায় সেগুলো মৌলিক গল্পে নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্রমেই বাণিজ্যিক ধারার ছবিকে টেক্কা দিয়ে বিকল্প ধারার ছবি বেশ ভালো ব্যবসা করছে। পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে।
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত টালিগঞ্জে মুক্তি পেয়েছে শতাধিক চলচ্চিত্র। বছরের প্রথম ছবি ছিল ‘রাতের রজনীগন্ধা’ এবং এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত শেষ ছবি ‘কিরীটি রায়’। এ ছাড়া এর ভেতর ছিল বেশ কয়েকটি যৌথ প্রযোজনার ছবি। ২০১৫ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যার সঙ্গে সমানুপতিক বলা চলে। গত বছর মুক্তি পেয়েছিল সমানসংখ্যাক চলচ্চিত্র।
টালিগঞ্জ চলচ্চিত্রের প্রযোজক গিল্ডের তথ্যমতে এই বছর বাণিজ্যিক ছবির চেয়ে বিকল্পধারার ছবিগুলো এগিয়ে। ‘প্রাক্তন’,‘সাহেব বিবি গোলাম’,‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’,‘কিরীটি ও কালো ভ্রমর’,‘ঈগলের চোখ’ এবং ‘জুলফিকার’ বেশ ভালো ব্যবসা করেছে।
এদিকে খুব বেশি লাভ না হলেও মোটামুটি ভালো চলেছে ‘বাস্তুসাপ’,‘কি করে তোকে বলবো’, ‘কেলোর কীর্তি’, ‘ক্ষত’, ‘গ্যাংস্টার’‘বাদশা’, ‘শিকারী’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্র।
ব্যবসায়িক পরিসংখ্যানে বাণিজ্যিক ছবি পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দক্ষিণ ভারতের ছবি রিমেকের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। অনেকে পত্রিকার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে কঠোরভাবে বিরোধিতা করছেন। সেই সঙ্গে ক্রমেই প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আঙুল তুলছেন রিমেক ছবির ওপর।
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী সেখানকার এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এখনকার বাণিজ্যিক ছবি যদি সেভাবে চলত তাহলে হলের সংখ্যা ৭৫০ থেকে কমে ২০০ তে এসে দাঁড়াত না। দেব, জিতের ছবি চলছে না। কারণ রিমেক করা ছবির চাহিদা কম। এক ছবি মানুষ দুইবার দেখতে চায় না। রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছি তখন দেখছি একের পর এক হল উঠে যাচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির মৃত্যু দেখছি।’
টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন প্রণয় রায়। পাশাপাশি নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে ২০১৬ সাল রিমেকের পতন এবং মৌলিক গল্পের ছবির উত্থানের বছর। যা ২০১৭ থেকে টলিউডকে নতুন পথ দেখাবে।’
পেলে ভট্টাচার্য্য একজন চিত্রনাট্যকার। রিমেক ছবির চিত্রনাট্য লিখেন বেশির ভাগ। তাঁর কাছে চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে এগিয়ে। এ বিষয়ে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা দেন, ‘এই বছরটিতে আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা বলতে গেলে অ্যাভারেজ। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় অবস্থা কিছুটা ভালো। সেই সঙ্গে কয়েক বছর আগে যৌথ প্রযোজনার যে বীজ রোপিত হয়েছিল সেটা ২০১৬ তে এসে ভালোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সবমিলিয়ে বলা যায় এই বছরটি বেশ ভালো গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের জন্য।’
সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সাল পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। রিমেক ছবি নির্মাণ কমে যাবে। মৌলিক গল্পের ছবি টালিগঞ্জের ছবিকে নিয়ে যাবে অন্য উচ্চতায়। এখন দেখার বিষয় আসছে নতুন বছরে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়।