গাজীপুর সিটির মেয়র এম এ মান্নান জামিনে মুক্ত
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর ১টায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এ সময় কারাফটকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, উচ্চ আদালত থেকে অধ্যাপক এম এ মান্নানের জামিনের কাগজপত্র বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে তা যাচাই-বাছাই শেষে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি গত বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে এ কারাগারে বন্দি ছিলেন।
অধ্যাপক মান্নানের আইনজীবী মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে সর্বমোট ২৮টি মামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয়ে টঙ্গীর শিলমন এলাকার মো. রমিজ উদ্দিনকে মারধরের অভিযোগে অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ সাতজনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরো দু-তিনজনের বিরুদ্ধে গত ২৪ নভেম্বর জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় কারাবন্দি মান্নানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে এ মামলায় তিনি জামিন লাভ করেন। এর আগে বাকি ২৭টি মামলায় উচ্চ আদালত তাঁকে জামিন দেন। দায়ের করা এসব মামলার প্রায় সবগুলোই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালকালে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নাশকতা, বিস্ফোরক ও পুলিশের সরকারি কাজে বাধাদানসহ বিভিন্ন আইনে করা হয়েছে।
এদিকে মেয়র মান্নান শুক্রবার কারামুক্ত হচ্ছেন এমন খবরে সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কারাফটকে উপস্থিত হন। কারাফটক থেকে তিনি বের হয়ে এলে দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় কারাফটকে অন্যদের মধ্যে গাজীপুর বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. শহীদুজ্জামান, কাউন্সিলর তানভীর আহমেদ, বিএনপি নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, ইদ্রিস আলী, আবদুল খালেক ডিলার আকন্দ, যুবদল নেতা আরিফ হাওলাদার, জসিম ভাট, ছাত্রদল নেতা নাসির উদ্দিন নাসির, আমিনুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তি পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আজ বেশি কথা বলতে পারবেন না। কারাগারে অন্তরীণের ব্যাপারে অন্য সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি সাংবাদিকসহ সবার কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া চান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমেদ জানান, নানা রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মুক্তিলাভের পর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মোট ২২ মামলায় প্রায় ১৩ মাস বন্দি থাকার পর আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত বছরের ২ মার্চ তিনি কারামুক্ত হন। গত এপ্রিল মাসে তিনি মেয়র পদ ফিরে পান। এ অবস্থায় গত বছরের ১৫ এপ্রিল এম এ মান্নানকে ফের নাশকতার তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই মাসে মেয়র পদ থেকে তাঁকে ফের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ১৫ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এ বন্দি ছিলেন।
অধ্যাপক মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক মান্নানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ২৮টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।