ধনী আরো ধনী, গরিব আরো গরিব হয়েছে : বিএনপি
বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেওয়া ভাষণে দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরলেও বিএনপি মনে করে, এই সময়ে সমাজে মানুষে-মানুষে বৈষম্য বেড়েছে। যাতে ‘উন্নয়নের সুফল সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট কিছু ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত’ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের একদিন পর আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেওয়া বিভিন্ন তথ্য খণ্ডন করা হয়। পাশাপাশি বিএনপির আমলের অর্থনৈতিক-সামাজিক খাতের অগ্রগতির তথ্য সন্নিবেশ করা হয় এতে।
বিএনপি মহাসচিব লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গত আট বছরে ধনী আরো ধনী, গরিব আরো গরিব হয়েছে। Plutocratic শাসনের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নজিরবিহীন দলীয়করণ, প্রশাসন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু করেছে।’
‘জবাবদিহিতার অভাব, অকার্যকর পালার্মেন্ট দুর্নীতিকে লাগামহীন পর্যায়ে নিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। শেয়ার মার্কেট লুট, ব্যাংক লুট, দলীয় ব্যক্তিদের জন্য ঋণ সুবিধা ও ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা একনায়ক সরকারের সমর্থক ও তল্পীবাহকরা বা লাগামহীনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও গণলুট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভেতরে ভেতরে অন্তঃসার শূন্য করে ফেলছে।’
বন্দুকের মুখে বিরোধী দল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের কথা বলেছেন, যা সঠিক নয়। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। ৫ ভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সারা দেশের মানুষ এবং বহির্বিশ্ব সেই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি।’
বিএনপি মনে করে, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছিল সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে।’ দলের মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে বন্ধুকের মুখে জিম্মি করে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি এবং আরো অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও সেটা গ্রহণ করা হয়নি। সেই সময়কার তামাশা ও নাটক সবার মনে থাকার কথা।’
বিএনপির সময়ে জিডিপি ৭ পার হয়
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রথম সাতের কোঠা অতিক্রম করে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে। তার আগে ২০০৫-০৬ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৭৬ ভাগ। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১১ ভাগ, আর আগামী বছরে হবে ৭ দশমিক ৪ ভাগ হারে।’
‘এদিকে বিশ্বব্যাংক তাদের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, এ বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ ভাগ। আর আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ বছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ ভাগ। কারণ যেসব উপাদানের ওপর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে, বিশেষ করে বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স সেগুলো নিম্নগামী রয়েছে। বারবার জিডিপি হিসাবের বিভ্রাটে ফেলা হচ্ছে জাতিকে। বিএনপির আমলে সাত ভাগ অতিক্রম করেছে যে প্রবৃদ্ধি বর্তমান সরকারের আমলে তা বরং হ্রাস পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মাথাপিছু আয়ের যে চিত্র দেওয়া হয়েছে, তাতেও শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে দাবি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মাথাপিছু আয় ৫৪৩ থেকে বেড়ে এক হাজার ৪৬৬ ডলার হয়েছে। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি হলো আয় বৈষম্য বেড়েই চলেছে। উন্নয়নের সুফল কিছু সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট ব্যক্তিদের কাছে কুক্ষিগত হচ্ছে। দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের অবস্থা আরো শোচনীয় হচ্ছে।’