লিটন হত্যাকারীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে : প্রধানমন্ত্রী
সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রকে অভিযুক্ত করে হত্যাকারীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে শোনা যায় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা কোথায় কে একটু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের শেষ করে দেওয়া হচ্ছে, তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যা পরিকল্পনাই বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা যেমন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি তখন লিটনের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ঠিকই খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং গাইবান্ধা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। এটাই ছিল তার অপরাধ। এ জন্যই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। লিটনের মৃত্যুতে আমরা একটি সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে হারিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র প্রচণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। সে সময় ওই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে এবং আগুন দিয়ে চারজন পুলিশকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে আগুন দিয়ে সেখানে কর্মরতদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রায় দেড়শ থেকে ২০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং সেখানে এক ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টি করে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে আগুন দেয়, রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলে। সেখানে দুজন পুলিশ সদস্য মারা যায়। সেইসঙ্গে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে। ওই সময় এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল যে কোনো মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত জোট ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় তারা ঢাকা-রংপুর হাইওয়েতে প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র রামদা, কিরিচ ও ঢাল-সরকি নিয়ে রাস্তায় টহল দেয় যাতে রাস্তায় কোনো যানবাহন চলতে না পারে। ওই সময় হাজার হাজার গাড়ি পোড়ানো হয়, গাছ কাটা হয়। পলাশবাড়ীর মহেশপুর ইউনিয়ন, সাদুল্যাপুর, ঘোসাইগাতি ব্রিজ এলাকা, সাঘাটা উপজেলার রেললাইনের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলা হয় যাতে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে জামায়াত-শিবির খুব সক্রিয় ছিল। তুলসিঘাটে বাসে আগুন দিয়ে নয়জনকে হত্যা করে এবং আরো অনেকে আগুনে পুড়ে আহত হয়। গোবিন্দগঞ্জে তরুণ দত্ত, দেবেশ প্রামাণিক নামে দুজনকে গলাকেটে রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়। সুন্দরগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা মামুনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
‘২০১৫ সালে তারা আবার সরকার উৎখাতের নামে একই তাণ্ডব চালায়। সারা বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে তারা হত্যা করে। প্রায় ২৩১ জনকে পেট্রলবোমা দিয়ে হত্যা করে। ট্রাক ও সিএনজিচালক, রিকশাচালক, ঠেলাওয়ালা, ট্রাক-বাসের হেলপার রেল-লঞ্চ কোনো কিছুই তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটের আক্রমণে কলেজছাত্র অভি, ছয় বছরের রুপা, অন্তঃসত্ত্বা নারী মনোয়ারা ও তার গর্ভের সন্তান নিহত হয়।
শিশুর গায়ে গুলি করা হয়েছিল বলে লিটনের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌরভের বাবা আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ওই পরিবারের সঙ্গে লিটনের সুসম্পর্ক ছিল। তাকে সে কেন গুলি করতে যাবে? সেদিন সন্ত্রাসীরা লিটনকে হত্যা করার জন্য অতর্কিত হামলা চালায়। সে আত্মরক্ষার জন্য ফাঁকা গুলি চালায়। সৌরভের গায়ে যে আঘাত লেগেছিল সেটা নিয়েও অনেক সন্দেহ ছিল বা হতে পারে ফাঁকা গুলিও কারো গায়ে লাগতে পারে। কিন্তু শিশু হত্যা করতে গিয়েছিল বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমনভাবে লেখা হয়েছে যে সত্যিকারের ঘটনা কেউ তুলে ধরেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনার পর লিটনের লাইসেন্স করা অস্ত্র জব্দ করা হয়। তাঁর বাড়ির পুলিশ পাহারা সরিয়ে নেওয়া হয়। যার ফলে তাঁর বাড়িতে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে সে এ পর্যায়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলেই তাঁকে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত করা হয় এবং সেখানকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যত দিন তিনি বেঁচে ছিলেন তত দিন সুন্দরগঞ্জের মানুষের মনে একটা স্বস্তি ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিটন গোলাম আযমকে তাঁর এলাকায় যেতে দেয়নি। এ ছাড়া সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র লিটনকে হত্যার মধ্য দিয়ে এসব ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা সুন্দরগঞ্জে ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনের নামে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল। লিটন ওই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। লিটন হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার চান তিনি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানান।
ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, চৌকস পুলিশ সদস্যরা লিটনের হত্যার ব্যাপারে তদন্ত করছে। শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কদের বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, লিটন সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত, তিনি জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ওই এলাকায় যেতে দেননি। সব সময় সত্য কথা বলার কারণে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, হত্যা শুধু আজকেই নয়, ১৯৭৩-৭৪ সালে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অনেক সংসদ সদস্যকে হত্যা করেছে। ওই চক্র এখন আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, মীর শওকত আলী বাদশা, শামীম ওসমান, মাহবুব আরা বেগম গিনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।