সার্চ কমিটি
প্রত্যাশা পূরণ হবে কী?
আফসান চৌধুরী
লেখক : শিক্ষক, গবেষক ও সাংবাদিক
এটা খুব ভালো একটা বিষয় যে, একত্রিশটি রাজনৈতিক দল একটা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে। এর আগে এ রকম কখনো হয়নি। এর পরে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন সার্চ কমিটি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। সার্চ কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউ রাজনৈতিক ব্যক্তি বলে আমার মনে হয় না। অতএব, ধরা যায় যে তাঁরা মোটামুটি তাঁদের সামাজিক অথবা পেশাগত অবস্থার কারণে বিবেচিত হয়েছেন। কিন্তু সার্চ কমিটি নিয়ে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, বিএনপি যেমন এটাকে দুঃখজনক বলছে। বিএনপি কী চেয়েছিল, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সার্চ কমিটি তো বাংলাদেশ সরকারের একটা বিষয়। বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটি করবে। সংবিধানের কোনো জায়গায় তো লেখা নেই যে বিরোধী দলের মতামত নিয়ে বা বিরোধী দলের ইচ্ছা অনুযায়ী সার্চ কমিটি করা হবে। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, সার্চ কমিটি যে একটা রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হলো, এতে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব দুর্বল। এবং ৪৫ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি সবল হয়নি। তো, যে দেশের রাজনীতি এত দুর্বল, তাতে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে যখন এতটা কথাবার্তা হয়, তখন বোঝা যায় যে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দুরবস্থার মধ্যে আছি।
সাংবিধানিক এ কারণেই বললাম, সংবিধান থাকলে আর এটা নিয়ে কোনো কথা হতো না। সংবিধান যদি সবলভাবে থাকত। কিন্তু ৪৫ বছরের ইতিহাসও একটু দেখা দরকার। সার্চ কমিটি আজকে এত বড় বিষয়ে কেন পরিণত হচ্ছে? কারণ, আমরা নির্বাচন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নই।
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সার্চ কমিটি নিয়ে রাষ্ট্রপতির ওপর সবাই আস্থা রেখেছিলেন। রাষ্ট্রপতি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন ঠিকই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া হলো যে সরকারি ব্যক্তি, তাঁদেরও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এই সার্চ কমিটিতে। ফলে সার্চ কমিটি যেভাবে হলো তাতে সবার আশা পূরণ হলো বলে আমার মনে হয় না।
আবদুল লাতিফ মাসুম
অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এই সার্চ কমিটি ব্যতিক্রমধর্মী হবে, সেটাই আশা করেছিলেন সবাই। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম যে যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীন ঘরানার লোক। সুতরাং এতে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে না বলেই আমাদের ধারণা। এবং এর আগে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এটা হতাশাজনক।
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
চেয়ারম্যান, জানিপপ; প্রোভিসি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
আমি রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এবং যে কয়টি নাম দেখতে পেয়েছি, এঁরা সবাই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে এবং আমি আশাবাদী যে এঁরা ছয়জন মিলে জাতির যে প্রত্যাশা, তা পূরণ করতে সক্ষম হবেন।
তবে এঁদের ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দলসহ বাকি ৩১ রাজনৈতিক দল মেনে নেবে কি?
মেনে নেওয়া না-নেওয়া তো ভিন্ন বিষয়, আগে তো আমাদের দেখতে হবে বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। সে ফলটা দেখতে হবে। ১০ কার্যদিবসের পর তাঁদের কাজ দেখে মন্তব্য করা উচিত হবে।
শ্রুতিলিখন সেখ ফয়সাল আহমেদ