নাম নিয়েই রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটি
রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাঁদের নাম প্রস্তাব করেছে, সেই সব নামের মধ্য থেকেই ১০ জনকে মনোনীত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে যাচ্ছে সার্চ কমিটি। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে বিশিষ্টজনরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাও বিবেচনায় নিয়েছে কমিটি।
আজ সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে সার্চ কমিটি এসব নাম চূড়ান্ত করে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।
বিকেল ৪টার দিকে সার্চ কমিটির ছয় সদস্য চতুর্থ ও শেষ বৈঠকে বসেন সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে। বৈঠক শেষ হয় ৬টার কিছু আগে। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন অতিরিক্ত সচিব।
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যেই কাজের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছেন। এরই মধ্যে ১০ জনের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। আজকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এ সময় সাংবাদিকরা ১০ জনের নাম জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, নাম বলা যাবে না। নাম প্রচার করা হবে কী হবে না তা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে নাম প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নাম নির্বাচনের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এটা স্পেসিফিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রস্তাব করেছে, তার মধ্য থেকেই সুপারিশ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।
৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করে অতিরিক্ত সচিব আরো জানান, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের মতামতে নির্বাচন কমিশনারদের যে যোগ্যতা ও মানদণ্ডের কথা বলেছেন, মূলত তাঁদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই এ মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনের সারক্ষেপ তাৎক্ষণিকভাবে বলতে চাননি অতিরিক্ত সচিব।
আজকের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুর রহমান, মহাহিসাব নিরীক্ষক মাসুদ আহমেদ, সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
এই বৈঠক থেকে বেরিয়েই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান সার্চ কমিটির সদস্যরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুদিন আগে কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে ১০টি নাম প্রস্তাব করছে।
গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের এই অনুসন্ধান দল গঠন করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়। আগামীকালই শেষ হচ্ছে এই সময়সীমা।
পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে এবার প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন একজন নারী। সার্চ কমিটি গঠন করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়। ফলে সার্চ কমিটি আটজন পুরুষ ও দুজন নারীর নাম সুপারিশ করতে যাচ্ছে।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক ছাড়াও প্রথমে ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পরে আরো চারজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দলের কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম জমা নিয়েছে তারা। বাকি দলগুলোর চারটি সার্চ কমিটিতে নাম দেয়নি আর একটি দল নির্ধারিত সময়ের পর নাম জমা দেওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ১৩০টি নামের মধ্য থেকে ২০টি নাম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকে বসে গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি)।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩১টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আর এই সংলাপ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর গঠন করা হয় সার্চ কমিটি।
২০১২ সালেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন।