৩৪ ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল, উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ
মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং ১৪ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দেন।
বেলা ১১টার পর থেকে হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেওয়া শুরু করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে আজ সোমবার রায় ঘোষণার জন্য সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল।
লাইসেন্স বাতিল ২০টি কোম্পানি হলো- মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিড ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল ও সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল।
এ ছাড়া মানসম্মমত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ১৪টি কোম্পানি হচ্ছে ফিনিক্স কেমিক্যাল, আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
একইসঙ্গে রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন আদালত। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, যে কমিটি ওষুধ উৎপাদনে গুড ম্যানুফ্যাক্চারিং প্রাকটিস (জিএনপি) মনিটরিং করবে। এই কমিটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন অধ্যাপক, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একজন কর্মকর্তা এবং যে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানহীন ওষুধ কোম্পানিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে- ওই কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এই সদস্যরা জিএনপির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করবে।
এছাড়া ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালককে (ডিজি) ৩৪টি কোম্পানির বিষয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রতি চার মাস পরপর তাঁকে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মনজিল মোরসেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করে। এর মধ্যে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞদল যাচাই-বাছাই শেষে ২০টি ওষুধ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল ও ১৪ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদন বাতিলের সুপারিশ করে। আদালত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন।
এরই মধ্যে আটটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে জানান মনজিল মোরসেদ। এই তালিকা অনুযায়ী বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, এসব ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৬ সালের ৫ জুন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়।
রিটে বলা হয়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন পেশ করে, যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় রিট দায়ের করা হয়।