মিতু হত্যায় বাবুলকেই সন্দেহ করছেন শ্বশুর মোশাররফ
চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় স্বামী বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকেই এবার সন্দেহ করছেন তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
বাবুলের হঠাৎ পরিবর্তন, স্ত্রী হত্যার তদন্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অসহযোগিতা এই সন্দেহের কারণ বলে মনে করছেন মিতুর বাবা। এ ছাড়া বাবুলের সঙ্গে মাগুরায় এক নারীর ‘অনৈতিক’ সম্পর্কের বিষয়টি মিতু হত্যার কারণ হতে পারে বলে মোশাররফ অভিযোগ করেন।
মিতুর পরিবারের অভিযোগ, বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
গত ৫ জুন মোটরসাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত তৎকালীন এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে প্রথমে ছুরিকাঘাত ও পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। সেদিন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের বাসার ঠিক ৫০ গজ দূরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার পর তদন্তে নামে পুলিশের একাধিক সংস্থা। প্রথমে সন্দেহ করা হয়ছিল জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে আটক করে পুলিশ। তদন্তের এই পর্যায়ে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকেও প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর কিছু দিন পর পুলিশের চাকরি হারান বাবুল। সর্বশেষ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার ছিলেন তিনি।
ঘটনার প্রায় আট মাস পর মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলছেন, বাবুলের গতিবিধি সন্দেহজনক। বাবুলের আচরণে হঠাৎ কিছু পরিবর্তন তাদের সন্দেহকে আরো পোক্ত করেছে।
খুনিকে ধরার প্রচেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের ভাষায় নাই বললেও চলে, একেবারে জিরোতে। (বাবুলের) চাকরি যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আশা করছিলাম, বিশ্বাস ছিল আমাদের যে, চাকরি থাকলে আমরা হান্ড্রেড পারসেন্ট যে আমরা মেয়ের খুনের রহস্য কী তা জানতে পারব। কিন্তু যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ওর যে মুভমেন্ট দেখতেছি এতে তার স্ত্রীর বা আমাদের মেয়ের খুনির তথ্য উদঘাটন হোক বা বিচার হোক এ ব্যাপারেও হান্ড্রেড পারসেন্ট নেগেটিভ।’
মোশাররফ হোসেন জানান, নিজের স্ত্রী হত্যার তদন্তের বিষয়ে বাবুল প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছেন। সেই সঙ্গে কিছু দিন আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নিয়ে দুই বাচ্চাসহ বাবুলের মগবাজার এলাকায় চলে যাওয়া, সে বাসার কাছেই তাঁর কথিত বান্ধবীর ফ্ল্যাট এবং সেই ফ্লাটে বাবুলের যাওয়া-আসার অভিযোগ, এই সন্দেহের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মোশাররফ।
মোশাররফ বলেন, ‘ওই দারোগা একরামের বোন, ভগ্নিপতি, ছেলেমেয়ে অনেকে আসল। আইস্যা তারা বলল যে, এ তো আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত। তার কারণেই আমার ভাইরে, আমার ভাবী মারছে এবং সে এই মারার পরিকল্পনাকারী। এসব কারণে মিতু হত্যায় যে সে জড়িত থাকতে, পারে এটা দিন দিন বিশ্বাস জন্মাচ্ছে।’
বাবুলের কথিত বান্ধবী বনানী বিনতে বশির বর্নি সম্প্রতি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বাবুল আক্তার নামে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে তিনি চেনেন না।
এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের বক্তব্য জানতে তাঁর কর্মস্থল ও টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘নিবিড়ভাবে আমরা মামলাটা তদন্ত করছি। এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ আমরা নিঃসন্দেহে উদঘাটন করব।’
বাবুল ও মিতু দম্পতির সাত বছর বয়সী এক ছেলে ও চার বছরের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।