বাসচালকের যাবজ্জীবন বহাল রাখতে এরশাদের অনুরোধ
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসচালককে দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার আদেশ বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান, তারা যেন পরিবহন শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের মুখে আইন থেকে সরে না যায়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ এই আহ্বান জানান। এরশাদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধের একমাত্র উপায় কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় বাসচালকের (জামির হোসেন) যাবজ্জীবনের রায় বহাল রাখতে হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘এই সরকার আইন করেছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন (আদালত)। রাখতে পারবে কি না জানি না। তবে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। কতদিন থাকবে জানি না। তবে সরকারকে অনুরোধ করব আপনারা কিন্তু আইন থেকে সরে যাবেন না। যে আইন করেছেন সে আইনের ব্যাপারে দৃঢ় থাকবেন। আইন থেকে সরে গেলে প্রতিদিন মানুষ মারা যাবে, প্রতিদিন। যদি শক্ত আইন করা যায়, সে আইন বাস্তবায়ন করা যায় তবে ড্রাইভাররা সতর্ক হবে। তাহলে এত প্রাণহানি হবে না।’
গত ২২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল মাহমুদ ফায়জুল কবির। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার পর থেকে কয়েকদিন ধরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে যশোর শ্রমিক ভবনে জরুরি সভায় বসেন খুলনা বিভাগের ৩৪টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। সভা শেষে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল হক মিন্টু ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
ওই ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল সোমবার রাতে তাঁর বাসায় শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলা অবস্থায় তাঁরা ঢাকার সাভারের ট্রাকচালক মীর হোসেন মিরুর (৪০) মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর পান। এরপর সারা দেশে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
ট্রাকচালক মিরুকে সাভারের ঝাউচর এলাকায় খোদেজা বেগম (৩৮) নামের এক নারীকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার দায়ে গতকাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রদীপ কুমার রায়। একই সঙ্গে আদালত ট্রাকচালকের সহকারী ইনতাজ আলীকে খালাস দেন। রায়ের পর মীরুকে কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ের ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলি গোলাম দস্তগীর বলেন, মামলার বাদী নিহত খোদেজা বেগমের স্বামী নুরু গাজীর বাড়ি সাভারের ঝাউচর এলাকায়। ট্রাকচালক মিরুর বাড়িও ওই এলাকায়। ২০০৩ সালের ২০ জুন নুরুর বাড়ির সামনের পারিবারিক রাস্তা দিয়ে ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছিলেন মিরু। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ট্রাকের সামনে এসে দাঁড়ান নুরু ও তাঁর স্ত্রী খোদেজা বেগম। এ সময় তাঁরা তাঁদের পারিবারিক রাস্তা দিয়ে মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিরু হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁদের ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেন। নুরু সরে যেতে সক্ষম হলেও খোদেজা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।