ইলেকট্রনিক ভোটিং নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি ইসি
নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের (ই-ভোটিং) প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশনের আছে। তবে এটা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান তাঁরা। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ মতামতও চান।
আজ মঙ্গলবার বরিশালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। বানারীপাড়া ও গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশনের আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব না কত সময় নাগাদ, কখন এটা আমরা প্রচলন করতে পারব। আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। পরীক্ষা হিসেবে কোনো কোনো জায়গায় প্রয়োগ করার দরকার আছে, তা করিনি। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। এ দেশে কতখানি প্রয়োগ করা যাবে তার ওপর নির্ভর করে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’
সিইসি আরো বলেন, ‘আমাদের বিগত পরিচয় যাই থাক না কেন, কর্মকাণ্ড যাই থাক না কেন ভবিষ্যতে নির্বাচনগুলো নিরপেক্ষভাবে, সুষ্ঠুভাবে এবং কোনো ব্যক্তি বা দলের কাছে নতি স্বীকার না করে কঠোর হস্তে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। আমার মনে হয় কিছুদিন পর উনারা বুঝতে পারবেন আমরা কতখানি নিরপেক্ষ।’
নুরুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশে সব নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, নিরপেক্ষভাবে আমরা আয়োজন করতে পারি, সংবিধানের প্রক্রিয়ামতে যেন নির্বাচন করতে পারি সে ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। শপথ গ্রহণের পর আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। সে চেষ্টা সফল হবে না যদি না আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন আমরা না পাই।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্তি সচিব মোখলেছুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ মারুফ হাসান, বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার এস এম রুহুল আমিন, র্যাব ৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার উজ জামান, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব বিধিবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
এ টি এম শামসুল হুদা সিইসি থাকার সময় পরীক্ষামূলকভাবে একাধিক জায়গায় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়েছিল। সম্প্রতি বিদায় নেওয়া কমিশন তা বাতিল করে দেয়।
পরের দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি অভিযোগ করে, জালিয়াতির জন্য প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালু করতে চাইছেন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার পছন্দের নির্বাচন কমিশন বসিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তাই ষড়যন্ত্র ও কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
রিজভী বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ই-ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী, তা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক। এর সার্ভেয়ার (সার্ভার) থাকবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সুতরাং, সরকার, সরকারের জন্য ভোট ম্যানিপুলেট (কারসাজি) করা খুবই সহজ হবে। এটি জনগণের ভোটকে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টামাত্র। এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেলকিবাজিরই বর্ধিত প্রকাশ।’