দেশে আইনের শাসন নেই : এরশাদ
দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধামন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দেশে বিনা অপরাধে অনেককেই মেরে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এরশাদ।
প্রধামন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘যার সন্তান গেছে, যে স্ত্রীর স্বামী গেছে সে বুঝতে পারে। সে কোথায়, নিরুদ্দেশ। তার শাস্তি হোক, ফাঁসি হোক, সে নিশ্চিত থাকতে পারত, না অপরাধ করে শাস্তি হয়েছে। বিনা অপরাধ, কোনো অপরাধ নেই সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। মায়ের চোখের পানি কোনো দিন শুকায় না। স্ত্রীর বুকে হাহাকার, কেউ সান্ত্বনা দিতে পারে না। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে।’
এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দাবি করেন, ‘আমার হাতে কোনো রক্তের দাগ নেই। আমার কবি হৃদয়। আমি রক্ত নয়, আকাশ-বাতাস ও ফুলকে ভালোবাসি।’
ভারতের উদাহরণ টেনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সেখানে প্রবাদ আছে, উত্তরপ্রদেশ যার দিল্লির মসনদ তার। ঠিক বাংলাদেশেও তাই, উত্তরবঙ্গ যার দেশের শাসনভার তার।’
কারাগারে থাকার স্মৃতিচারণা করে এরশাদ বলেন, ‘১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আমাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। ছয় বছর জেলে ছিলাম। খালেদা জিয়ার কারাগারে কারো সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দেওয়া হতো না। তাঁরা চেয়েছিলেন আমি যেন জেলেই মারা যাই। তারা আমাকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল, তবু মনোবল হারাইনি। জানতাম একদিন মানুষের ভালোবাসায় জেল থেকে বের হব।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ৩৩টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। যার মধ্যে বৃহত্তর রংপুরে ২১টি আসন। ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা যে জেল থেকে নির্বাচন করে কেউ একাই পরপর দুবার পাঁচটি আসনেই জয়ী হয়েছে। আমি সেটা পেরেছি, এ জন্য রংপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এরশাদ বলেন, ‘সেই সময় বিএনপি আমাকে ক্ষমতায় বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গিয়েও কোনো ফল পাইনি। আমি বুঝেছি আসল বন্ধু তারা কেউ না। আমার প্রতি কোনো মানুষের অভিযোগ নেই, আমার কারণে কোনো মায়ের চোখে জল নেই, তাই বেঁচে আছি। রংপুরের মানুষই আমার প্রকৃত বন্ধু। আগামীতে রংপুরের সব আসন পেলে জাতীয় পার্টি আবার ক্ষমতায় যাবে।’
নূর হোসেনকে হত্যা করেননি দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘নূর হোসেনকে বলির পাঁঠা হিসেবে সাজানো হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে নূর হোসেনের বাবাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার করে টাকা দিতাম। আমি তাঁকে হত্যা করিনি, আমার রক্তের দাগ নেই।’
বক্তব্য শেষে আগামী রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করেন এরশাদ।
মোস্তফার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক চিত্রনায়ক সোহেল রানা, মেজর (অব.) খালেদ আকতার, হাফেজ উদ্দিন, আবদুর রশীদ, সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফসহ অনেকেই।