আ. লীগের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সাক্কুর
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সাক্কু জানান, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ সোমবার নির্বাচনী প্রচারের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মনিরুল হক সাক্কু। সকালে মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেলতলী, পদুয়ার বাজার ও রামপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে আচরণবিধি রক্ষা করে আমরা কাজ করছি। অথচ অন্য প্রার্থী গেট, প্যান্ডেল করে প্রচার চালাচ্ছে। আমরা ছবি তুলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। ১০-১২টা মাইক লাগিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করছে। আমি নির্বাচনী বিধি মোতাবেক কাজ করছি।’ তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলারও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মনিরুল হক। ওসি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর কর্মীদের হয়রানি করার অভিযোগ করেন। গত শনিবার ওসি নজরুলকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে মনিরুল হক বলেন, ‘আমাদের সক্রিয় কর্মীদের আটক করা হয়। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আমার এক কর্মীকে আটক করায় আমি কাগজপত্রসহ অভিযোগ করি। এ কারণে সদর দক্ষিণ থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। আজ সোমবার দিনভর নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গেছেন বিএনপির নেতারা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন, তুলে দেন ধানের শীষের প্রচারপত্র।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবের রহমান শামিম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, আব্দুল আউয়াল খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন ভূইয়া শিশির, একরামুল হক বিপ্লব, সাবেরা আলাউদ্দিন, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। বিএনপির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়।
নেতারা ভাগ হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচার করেন। প্রচারের একপর্যায়ে খায়রুল কবির খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা পক্ষপাতিত্ব করবে, নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন। যদি তা না করা হয় তখন এ নির্বাচন নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হবে। নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে যেন সেখানে তারা ম্যানিপুলেট করতে পারে। জনগণ যেন ভোট দিতে না পারে, সেখানে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা সে খবর পাচ্ছি। আশা করি এ ধরনের পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না হয়।’
খায়রুল কবির খোকন আরো বলেন, ‘সাধারণ ভোটারদের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। ধানের শীষের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।’
১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকে আবদুল আউয়াল খান, কেন্দ্রীয় সদস্য সালাহ উদ্দিন ভূইয়া শিশির, একরামুল হক বিপ্লবের সমন্বয়ে গঠিত দল বজ্রপুর চৌমুহনীতে পথসভা, চকবাজার চৌমুহনী, কাঁসারীপট্টি, বজ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, বজ্রপুর চৌমুহনীতে পথসভা, প্রফেসরপাড়া, চর্থা চৌহমুনী, হোচ্ছামিয়া স্কুল, দারোগাবাড়ী, ইউসুফ স্কুল রোড, রাজগঞ্জ স্থানে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে শওকত মাহমুদ বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘বিএনপি জনকল্যাণ এবং উন্নয়নের রাজনীতি করে। সাক্কু কুমিল্লা ও নগরীর উন্নয়নে এবং জনকল্যাণে অতীতে পৌর চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়র থাকাকালে ব্যাপক কাজ করেছেন। কুমিল্লার উন্নয়নে তাঁকে আবার বিজয়ী করতে হবে।’
শওকত মাহমুদ বলেন, ‘সরকার কুমিল্লা নাম মুছে দিতে চায়। কিন্তু কুমিল্লার সঙ্গে আমাদের আবেগ, ভালোবাসা জড়িত। যারা কুমিল্লাবাসীর আবেগে আঘাত করেছে, কুসিক নির্বাচনে কুমিল্লাবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করবে ইনশাল্লাহ।’
২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক নন্দপুর বিশ্বরোড থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বাতাবাড়িয়া, নন্দনপুর, চাঙ্গিনী এলাকায় গণসংযোগ করেন। জয়পুর (দক্ষিণ) পাড়া সমবায় সমিতির ঘরে উঠান বৈঠক করেন। জয়পুর উত্তরপাড়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘জনসমর্থন হারিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, নির্যাতন-গ্রেপ্তার-মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায়। কিন্তু এবার নয়-ছয় হলে কুমিল্লা থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।’
১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেরা আলাউদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য ও কুসিক নির্বাচনে বিএনপি মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক শামসুদ্দিন দিদারের সমন্বয়ে একটি দল ধর্মসাগর পাড়, বাদুড়তলা, ঝাউতলাসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে জনসাধারণের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ ফেনী জেলার নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে একটি দল ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাজাপাড়া, নেওড়া, ঢুলিপাড়া, এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় মিলন স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কুসিক নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বিগত কয়েকদিনে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই ধানের শীষের জয়জয়কার। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হলে দেশবাসী মেনে নেবে না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া আজ নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও প্রচারপ্রত্র বিতরণ করেন। এ সময় তাঁরা ধানের শীষে ভোট চান।