মাশরাফিকে নিয়ে হচ্ছেটা কি?
আরো পাঁচ-দশজন পেশাদার খেলোয়াড়ের মতো ক্রিকেটের একটা অংশকে বিদায় জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সরে দাঁড়িয়েছেন সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি থেকে। ৩৩ বছর বয়সী, ইনজুরি জর্জরিত একজন ক্রিকেটারের জন্য এটা কি খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার? সম্ভবত না। কিন্তু সহজ-স্বাভাবিক এই বিষয়টি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে পারিপার্শ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে। প্রশ্নটা তাই না তুলে পারা যাচ্ছে না যে, বাংলাদেশের সফল এই অধিনায়ককে নিয়ে আসলে হচ্ছেটা কি?
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর ঠিক আগ দিয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণ থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন মাশরাফি। নিজের ফেসবুক পেজে, একটা পোস্টের মাধ্যমে। এরপর টস করতে আসার সময় বিষয়টি নিশ্চিতও করেছিলেন তিনি। অবসর নিয়ে নিজের অবস্থান বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন প্রথম টি-টোয়েন্টি-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। এ নিয়ে যে জল ঘোলা হতে পারে, সেটাও হয়তো আঁচ করেছিলেন দুরদর্শী এই ক্রিকেটার। সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য।
কিন্তু মাশরাফির সেই সতর্কবার্তা কোনো কাজে আসেনি। ক্রমাগতই ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর অবসর সংক্রান্ত বিতর্কের ডালপালা। মজার ব্যাপার হলো, এই বিতর্কের আগুনে জোর হাওয়া দিচ্ছেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মাশরাফির অবসরের সিদ্ধান্ত জানার পরপরই তিনি একদফা সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, অধিনায়কত্ব ছাড়লেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেই যাবেন মাশরাফি। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ঢাকায় ফেরার পর আবারও একই রকম বক্তব্য শোনা গেছে বিসিবি সভাপতির মুখ থেকে। তিনি বলেছেন, ‘একটা কথা বারবার বলেছি, মাশরাফি কিন্তু টি-টোয়েন্টি ছাড়েনি। আমরা এখনো বলিনি মাশরাফি স্কোয়াডে নেই। ও অধিনায়কত্ব ছেড়েছে।’
মাশরাফি কিন্তু অধিনায়কত্ব ছাড়ার ব্যাপারে কিছুই বলেননি। তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে। ফলে বিসিবি সভাপতি কেন বারবার অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গ টানছেন, সেটাও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অবোধ্যই থেকে যাচ্ছে। আর মাশরাফি যেখানে অবসরই নিয়ে নিয়েছেন, সেখানে নতুন করে তাঁর দলে থাকা না থাকার প্রশ্নটাও তো একেবারেই অবান্তর।
মাশরাফি নিঃসন্দেহেই বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ একের পর এক চমকজাগানিয়া কীর্তি করে চলেছে ক্রিকেটবিশ্বে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লড়াকু মনোভাব গড়ে ওঠার পেছনে অধিনায়ক ও ব্যক্তি মাশরাফির ভূমিকা অস্বীকার করার মতো কাউকেই হয়তো পাওয়া যাবে না। স্বভাবতই বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর মনেও মাশরাফি আছেন অনন্য একটা জায়গা নিয়ে। জনপ্রিয় এই অধিনায়কের অবসর তাই বেদনা জাগাবেই। আর সেই অবসরকে ঘিরে এমন বিতর্ক-বিভ্রান্তিও নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খুব বেশি নেই। বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকতে হবে ৫০ ওভারের ওয়ানডে নিয়ে। সেখানে কিন্তু এখনো বাংলাদেশের ম্যাচগুলোতে টস করতে নামবেন মাশরাফি বিন মুর্তজাই। এখনো তিনি আছেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। মাশরাফিভক্তরা বরং সেই ওয়ানডে ফরম্যাটের জন্য তাঁকে শুভকামনা জানাতে পারেন। প্রার্থনা করতে পারেন যেন, মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ পায় আরো অনেক স্মরণীয় সাফল্য। আর শেষপর্যন্ত যখন সব ধরনের ফরম্যাট থেকেই অবসরের সময় আসবে, তখন যেন বিদায় নিতে পারেন মাথা উঁচু করে।