জীবন হওয়া উচিত রাজহাঁসের মতো : জয়া আহসান
বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, কলকাতাতেও ব্যাপক জনপ্রিয়। সেখানে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত ও জয়া অভিনীত ছবি বিসর্জন। ছবিতে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ছবি মুক্তির জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন জয়া। সেখানে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারের অনুবাদ করেছেন মেহেদী নোভেল।
তিনি আমাদের অফিসে এসেছিলেন পয়লা বৈশাখের আগের দিন। যদিও তাঁর পয়লা বৈশাখের দিন আসার কথা ছিল। জয়া আহসান যিনি একাধারে দুটি বিনোদন জগতে আছেন সাফল্যের শিখরে। দুই বিনোদন জগতেই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি আলাদা জগৎ। তাঁর সাথে কথা হলো এপার-ওপার দুই বাংলা নিয়েই। একবার সত্যজিৎ রায় তো একবার নুরুল আলম আতিক, একবার হুমায়ূন আহমেদ তো একবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তবে জয়া আমাদের বলেছেন, দুই বাংলা থেকেই তিনি যে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়ছেন তা আসলে একই। এর মধ্যে কোনো রং বা ধর্মের কোনো স্থান নেই।
কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম আপনি ঢাকা থেকে দূরে পহেলা বৈশাখ পালন করছেন। আপনি কি আসলে ঘরকে মিস করছেন?
জয়া আহসান : আমাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না। মা বাসায় প্রায় সব রকমের ভর্তা তৈরি করেছেন এবং আমাকে সেসব ভর্তার ছবি পাঠিয়েছেন। আমি ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অনুপস্থিত থাকলে অতটা খারাপ লাগে না, কিন্তু পয়লা বৈশাখে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় তা সম্পূর্ণরূপে সবকিছু থেকে আলাদা। এই আনন্দ-উৎসবে সবাই আত্মহারা হয়ে যায়। এমনকি যে মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় করে সেও কিছু টাকা জমিয়ে রাখে এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য। তারা তাদের গালে বাংলাদেশের পতাকা আঁকে, বাইরে ঘুরতে বের হয়। সাধারণ মানুষরা রঙিন জামাকাপড় পরে। এর মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা অন্যতম। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য আলাদা করে জিনিস কেনা হয়।
কলকাতায় পহেলা বৈশাখে তেমন কোনো উদযাপন হয় না। আপনার পরিকল্পনা কী?
জয়া আহসান : কলকাতায় আমার বন্ধুরা আমাকে দুপুরের খাবারের জন্য ডেকেছে। আবার কেউ কেউ বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে আসতে চায় আমার বাসায়। কিন্তু আমাকে সিনেমা হল পরিদর্শনের জন্য যেতে হবে। কারণ বিসর্জন মাত্র মুক্তি পেল। তাই বলা যায়, এটা আমার কাজে ব্যস্ত থাকার পয়লা বৈশাখ। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাগাভাগি করতে গিয়ে মনে হলো এটা আমার জন্য গর্ব ও আনন্দের।
ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসে বাংলা ভাষায় কথা বলতে কেমন লাগে?
জয়া আহসান : বাংলাদেশের লোকজন খুব বেশি আবেগপ্রবণ। কলকাতার মানুষরাও তাদের ভাষাকে ভালোবাসে। তবে হ্যাঁ, তাদের কিছু জিনিস আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে। ধরা যাক, আমি হাসপাতালে যাব ডাক্তার দেখাতে। তারা আমার পাসপোর্ট এবং পোশাক দেখে বুঝতে পারে আমি বাঙালি । কাউন্টারে থাকা ব্যক্তিটিও বাঙালি। আমি তার নামের ট্যাগ দেখে বুঝতে পারি। কিন্তু তারা সরাসরি আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে শুরু করে। তাদের এই আচরণটা বোঝা আসলে কঠিন। কেন একজন বাঙালি আরেকজন বাঙালির সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলবে? বাংলাদেশেও এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে যারা বাংলা ও ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। যেটাকে আমরা নাম দিয়েছি বাংলিশ। তারা তাদের বাংলা পড়ার ক্ষেত্রেও একই কাজ করে থাকে। এটি আসলেই খুব দুঃখজনক।
বিনোদন শিল্পের একজন হিসেবে, বাংলাদেশে যেমন পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা, গান, এবং সাহিত্য নিয়ে মাতামাতি হয় সেরকম মাতামাতি কি বাংলাদেশের শিল্প এবং সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে খুঁজে পেয়েছেন?
জয়া আহসান : না। আমি মনে করি বর্ডারের এপাশের লোকজন অনেক বেশি বঞ্চিত। আপনি এখানে সুনীল, শীর্ষেন্দুর উপন্যাস পাবেন কিন্তু বাংলাদেশের উপন্যাসের মধ্যেও এক ধরণের ক্ষমতা রয়েছে। শাহাদুজ্জামান, ইলিয়াস অথবা হুমায়ূন আহমেদ, হাসান আজিজুল হকের মতো প্রবীণ লেখকদেরও অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। উদাহরণসরূপ, হকের গল্পের মধ্যে এমন বিষয় ও স্তর পাবেন যা তখনই আপনি বুঝতে পারবেন যখন আপনি তাঁদের লেখা পড়বেন। আমি এখানে দেশবিভাগের ওপর ‘রাজকাহিনী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু আমাকে ‘খাঁচা’র কথাও বলতে হবে। এটিও দেশভাগের পটভূমিতে নির্মিত চলচ্চিত্র। এটি এমন একটি গল্পের ওপর নির্মিত যেখানে দেখা যায় কিছু পরিবার দেশভাগের সময় দুই বর্ডারের একটি ফাঁদে পড়ে যায়। তারা ভাবতে থাকে সব সমস্যার সমাধান হবে যখন আমরা বর্ডারের ওপারে পৌঁছে যাব। এটি একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র এবং এমন একটি গল্প যা সবার কাছে বলা উচিত। এখানকার লোকজনের মাঝে সে ব্যাপারটা অনুপস্থিত।
টলিউডে আপনার অভিনীত ছবি সম্পর্কে বলুন? তারা কি সৃজনশীলভাবে পরিপূর্ণ?
জয়া আহসান : দেখুন, সমস্যা দুদিকেই আছে এবং আমরা শিল্পীরা এর মধ্যে আটকে গেছি। আমরা সবসময় ভালো চরিত্র এবং ভালো গল্প খুঁজি। কিন্তু টলিউডে অনেক পরিচালকদের মধ্যে ভয় কাজ করে। সাহসটা কম। কিন্তু এখানকার চলচ্চিত্র শিল্প একটি বড় কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে গেছে। প্রত্যেক বিভাগের একটি আলাদা দায়িত্ব রয়েছে এবং প্রত্যেকেই তাদের কাজ কী সেটা জানে। সবকিছু থাকার পরও যদি এদের মধ্যে একজন প্রগতিশীল কোনকিছু করতে না পারে তাহলে এটি একটি দুঃখের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এখানকার মতো অত বিশাল কাঠামো নেই তবে সেখানে প্রচুর আবেগ রয়েছে। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে প্রোডাকশনের খরচও ঠিক করা হয়নি, কিন্তু পরিচালক বলে ওঠেন চল, শুটিং শুরু করি। আর আগে থেকেই ভালো চরিত্রের প্রতি আমার লোভ কাজ করে। আমি আমার আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হই এবং আপনি আমাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাকে পাবেন, যেখানে এমন কি শুটিংয়ের জন্য খাবার পানিটুকু পর্যন্ত নেই। এটাকে বলে পাগলামি আর আনন্দ। নির্মাতা হয়তো এই বিষয়গুলো বুঝবেন না, কিন্তু তাঁদের সততার ঝলক আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় ঠিকই দেখতে পাবেন। আমি এখানে সেই সততা পাইনি। টলিউডে সবকিছু গাণিতিকভাবে করা হয়, মোটামুটি সবকিছু দর্শককে মাথায় রেখে করা হয়। এই চিন্তাধারাটা খুবই সংকীর্ণ। তাই সত্যজিৎ রায়ের পর খুব কম ছবিই বের হয়েছে যা বড় চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু স্বাধীন পরিচালক আছেন, যাঁরা প্রান্তিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উদাহারণ হিসেবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে ধরা যায়। তিনি একজন তরুণ পরিচালক। যিনি নির্মাণ করেছেন ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, যা আন্তর্জাতিক উৎসবে সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। ছবিটি একজন প্রতিবন্ধীর গল্প, যিনি ঢাকার অন্তরালে থাকা জীবনটাকে দেখতে চান।
এখানে এবং বাংলাদেশে আপনার চরিত্রের পার্থক্যগুলো কী?
জয়া আহসান : সেখানে তারা আমাকে আকর্ষণীয় নারী চরিত্র দিয়ে ভরসা করে। হয়তো এই কারণেই আমি সেখানে বেশি স্বাধীন সিনেমাগুলো করে থাকি, তবে সেটাও ঘন ঘন করা হয়ে ওঠে না। পশ্চিমবঙ্গে পরিচালকরা নিরাপদে খেলতে পছন্দ। টলিউড ছবির নায়িকারা খুব বেশি স্ত্রীসুলভ; তাই তারা সেভাবেই নকশা করে থাকেন। তাঁরা অনেক ছোট মাপে চিন্তা করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে আমি সার্কাসের জীবনধারা নিয়ে একটি ছবিতে অভিনয় করেছি। সেখানে একটি শক্ত দড়ির ওপরে আমাকে স্টান্ট করতে দেখা গেছে। আমি কোনো বডি ডাবল ব্যবহার করিনি। এখানে মেয়েদের জন্য সেরকম চরিত্র কই? আমি নুরুল আলম আতিকের সাথে ‘পেয়ারার সুবাস’ করেছি। একজন নির্মাতার যেভাবে জীবন কাটানো উচিত, তিনি সেভাবেই জীবন কাটান। শুধু ছবি নির্মাণের মাধ্যমে কখনই একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে ওঠা যায় না। আপনাকে চলচ্চিত্র নির্মাতার জীবনধারাটা শিখতে হবে। যেমন এখানকার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, আমি তাঁর সঙ্গে বারবার কাজ করতে চাই। টলিউডের একটি সমস্যা হচ্ছে তারা ঠিক ততটুকুই চিত্রায়ন করবে যতটুকু তারা পরিকল্পনা করেছে এবং এর বাইরে তারা যাবে না। মাঝে মাঝে আমার তাদের কিছু বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি জানি এটা উচিত হবে না এবং তাদের ওপর দিয়ে কথা বলতে গেলে তারা আমাকে দেশে ফিরে যেতে বলতে পারে। তবে বাংলাদেশে পাগলামিটা একটু বেশি। সেখানে ঋত্বিক ঘটকের মতো পাগলামি হয় এবং সেটা সত্যজিৎ রায়ের চেয়েও বেশি। আমি ঘটকের একজন বড় ভক্ত। দেশবিভাগের ব্যথা তিনি বুঝেছিলেন এবং এই ক্ষত নিয়েই তিনি ভারতে এসেছিলেন। তাঁর কাজের মধ্যে সেই ব্যথাটা রয়েছে।
রাজকাহিনী ও বিসর্জন, এসব ছবিতে ঘুরেফিরেই সীমান্ত প্রসঙ্গ এসেছে। বাংলাদেশের একজন শিল্পী হিসেবে আপনার মন্তব্য কী?
জয়া আহসান : আমি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমি এমন একটি পাসপোর্ট নিয়ে আসি যেখানে লেখা থাকে আমি এখানে আমার বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছি এবং আমি এখানে এসে তাদের সাথে কাজ করি। তারা আমাকে এখানে স্বাগত জানায়, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে তারা জটিলতার মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশের জনগণ আমাকে বাংলাদেশের সম্পদ মনে করে এবং তাদের সেই আবেগ চরম মাত্রায়। তারা যখন আমাকে ভালোবাসে তখন তাদের হৃদয় থেকে ভালোবাসে। আবার তারা যখন কাউকে ছুড়ে ফেলতে চায় তখন জোরে সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে ফেলে। কিন্তু দিন শেষে আমি একজন শিল্পী এবং আমি যে সুযোগ পাই সেখানেই আমাকে কাজ করতে হবে। আরেকটা জিনিস যেটা আমাকে খুব বেশি বিরক্ত করে তা হলো যখন সাকিব আল হাসান এখানে খেলে, তখন সেটা বাংলাদেশের জন্য গর্ব হয়ে যায়, কিন্তু যখন জয়া আহসান ভারতে কাজ করে, কিছু লোকজন সেটা নিতে পারেন না। আমি মনে করি লিঙ্গ এখানে একটি বড় ব্যাপার হয়ে কাজ করে।
এই বছরটি আপনার জন্য একটি ব্যস্ত বছর। ওপারে আপনার অনেক ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
জয়া আহসান : হ্যাঁ এটা সত্য। তবে এই বছরে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ আমার জন্য অপেক্ষা করছে তা হলো আমি এ বছর নিজে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। সরকারী অনুদানে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে আমি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছি। আমি সরকারি অনুদান পেয়েছি তবে আমাকে বাকি টাকা জোগাড় করে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে ছবির কাজ শেষ করতে হবে। সিনেমাটির শুটিং চলছে। এটি মিসির আলী সিরিজের একটি উপন্যাস। ‘মনের মানুষ’ ছবিতে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী মিসির আলীর ভূমিকা অভিনয় করছেন।
যখন আপনি এখানে একটি চরিত্র পান তখন আপনার কি মনে হয় না আপনাকে এমন একটি চরিত্র দেওয়া হয় যা আসলে বাংলাদেশি ঢঙে কথা বলে? এটাকে কি আপনি সীমাবদ্ধতা বলে মনে করেন?
জয়া আহসান : (একটু সময় নিয়ে) আমি আমার দিক দিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা বোধ করি না। যদি আমি আমার চলচ্চিত্রে পূর্ববাংলার কাউকে নিই তাহলে তার চরিত্রটি সেই রকমভাবেই সাজানো হবে কারণ স্ক্রিপ্টটি এমনভাবেই লেখা হবে। সৃজিত আমাকে ‘রাজকাহিনী’ চলচ্চিত্রে এমন একটি চরিত্রের কথাই বলেছিলেন। কৌশিকদা অনেক আগেই বিসর্জনের গল্প লিখেছেন, তবে আমাকে দেখার পর তার পরিকল্পনা আরো মজবুত হয়। আর আমার জন্য আমি প্রান্তিক জনগণের গল্প খুব পছন্দ করি। তার মানে এই নয় যে, আমি শহুরে চরিত্র করতে পারি না। কিন্তু এসব চরিত্র আমার প্রথম পছন্দ নয়। যদি আমাকে ভারতের প্রান্তিক এলাকার আদিবাসী চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয় আমি হাসিমুখে সে অভিনয় করব। আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। তবে চরিত্রটি বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।
ভারতে যত পরিচালকের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন, তার মধ্যে কার সঙ্গে কাজ করে আপনি মানসিকভাবে তৃপ্ত হয়েছেন?
জয়া আহসান : অবশ্যই ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী ও কৌশিক গাঙ্গুলি। যদি আপনি সংগঠিত নির্মাণের কথা বলেন তাহলে বলব অরিন্দম শীলের কথা। তিনি আগে থেকেই গোটা ছবিটা তার চোখের সামনে দেখতে পান। তিনি শিল্পীদের কথা শোনেন এবং তাদের প্রচুর স্বাধীনতা দেন। অরিন্দমদা এবং আমার মধ্যে একটি বোঝাপড়া কাজ করে কারণ আমার প্রথম ছবি তাঁর সঙ্গে। ইন্দ্রনীলের সঙ্গেও ব্যাপারটা ঠিক একই রকম।
আর যদি সহ-অভিনেতার কথা বলি?
জয়া আহসান : অবশ্যই কৌশিকদা, আরো আছেন সোহিনি, আমি তাঁর সঙ্গে আগে থেকেই অভিনয় করে তৃপ্তি পাই। আবিরের সঙ্গে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমরা একসঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি এবং আমাদের মধ্যে সুরের একটা মিল রয়েছে। তবে ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার কাজ করা হয়নি। যদিও তাঁর কথা আমি অনেক শুনেছি। এ ছাড়া সবাই এখানে ভালো কাজ করেন। কিন্তু আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ। অভিনেতা হিসেবে যাঁরা অনিশ্চিত অথবা যাঁরা অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
সীমান্তের দুপাশেই প্রচুর ভক্ত রয়েছে আপনার, যখন আপনার নাম সহঅভিনেতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
জয়া আহসান : এটা খুবই বিরক্তিকর। আমি বুঝতে পারি না তাঁরা সবসময় ইমেজ নিয়ে কথা বলে। আমি যদি আমার কাজের মধ্যে একটা চমৎকার যাত্রা খুঁজে পাই তাহলেই আমি খুশি। বিনোদন শিল্প একটি অনন্য জায়গা। এখানে অনেক ময়লা এবং নোংরামি আছে। আপনাকে এগুলোর সঙ্গেই বাঁচতে হবে। এটা আপনার প্যাকেজের মধ্যেই। তবে আপনার জীবন হওয়া উচিৎ রাজহাঁসের মত, যখন আপনি জেগে উঠবেন তখন সকল ময়লা ঝরে পড়ে যাবে এবং আপনি এর উপর দিয়ে উন্মুক্ত ও নিষ্কলঙ্কভাবে হেঁটে চলে যাবেন।